বিতর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএফএইচ)। তাদের বিতরণ কেন্দ্রে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১০ জন।
আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে ৬২ জন। হামাসের মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
এক বিবৃতিতে গাজা প্রশাসনের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, ‘ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি গুলি করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত মানবাধিকার সংস্থা জিএইচএফ গত দুদিন ধরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। রাফাহে তাদের বিতরণ কেন্দ্রে জড়ো হয়েছে লাখো মানুষ। আর দুদিনই ইসরায়েল তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে।’
জনসংযোগ বিভাগ আরও বলেছে, ‘আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি যে, ঠিক কোন দিনের গুলিতে ওই ১০ জন নিহত হয়েছে।
তবে, দুদিনই হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। ক্ষুধার্ত মানুষদের খাবার দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে এভাবে হত্যা করা অত্যন্ত জঘন্য।’
ইসরায়েলের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গাজায় চারটি বিতরণ কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনার মধ্যে বুধবার দ্বিতীয় কেন্দ্রটি চালু করে জিএইচএফ।
তবে এই বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে কড়া আপত্তি জানিয়েছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তাদের বক্তব্য, ইসরায়েল যদি ত্রাণ সরবরাহে প্রবেশাধিকার দেয় এবং অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কাজ করতে দেয়, তাহলে বহু মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো যথেষ্ট ও নিরাপদ উপায়ে ত্রাণ সরবরাহ সম্ভব।
এ সময় গাজায় জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা চালু করতে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এই বার্তাই উঠে এসেছে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে। বৈঠকে আলজেরিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ গাজায় ত্রাণ প্রবেশে কোনো বাধা না দিতে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এতে অন্তর্ভুক্ত করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর অভিযোগ করেন, ইসরায়েল যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ত্রাণকে ব্যবহার করছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি ক্রিস্টেন সালুমি জানিয়েছেন, বৈঠকে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি সমন্বয়ক সিগরিড কাগ ও গাজায় সম্প্রতি মানবিক মিশনে যাওয়া সার্জন ফিরোজ সিধওয়া।
সালুমি বলেন, ‘এই দুই বিশেষজ্ঞের বক্তব্যেই উঠে এসেছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং গাজায় পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ সরবরাহ পুনরায় শুরু করার জোর দাবি।’
তবে এসব দাবি নাকচ করে ইসরায়েলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন উল্টো জাতিসংঘকেই ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে—জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান টম ফ্লেচারের এ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘ড্যাননের এই আক্রমণ আসলে প্রতিরক্ষামূলক।
কারণ, তারা জানে আন্তর্জাতিক পরিসরে জনমত ও কূটনৈতিকভাবে তারা ব্যর্থ এবং তাদের ভাবমূর্তি ধুলায় মিশে গেছে।’
এদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প প্রতিনিধি জন কেলি বলেন, জাতিসংঘের উচিত জিএইচএফ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা করে এমন একটি পদ্ধতি চালু করা যা সবার জন্য কার্যকর হয়।
তিনি জিএইচএফ-এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এই সংস্থাটি স্বাধীনভাবে পরিচালিত এবং নিরাপদ উপায়ে ত্রাণ পৌঁছানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি তৈরির লক্ষ্যেই গঠিত।