পহেলগাম হামলার প্রত্যাঘাতে ভারতের 'অপারেশন সিঁদুর' পর নজরদারি বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তল্লাশি চালিয়ে অন্তত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। খবর এনডিটিভি
সম্প্রতি পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন হরিয়ানার জনপ্রিয় ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্র । তবে আরও একাধিক উদাহরণ আছে, যারা কোনও না কোনওভাবে পাক এজেন্ট হয়ে কাজ করেছেন।
এদের মধ্যে একজন প্রকৌশলী রয়েছেন। যিনি ফেসবুকের মাধ্যমে হানি ট্রাপে পড়ে যুদ্ধজাহাজ সম্পর্কিত খবর পাচার করেন।
এছাড়া রয়েছে একজন ট্রাভের ভ্লগার। যিনি হরিয়ানার বাসিন্দা। তাকে সশস্ত্র ব্যক্তিদের পাহাড়ায় লাহোর মার্কেটে ঘুরতে দেখা গেছে। এই লাইনে রয়েছেন রাজস্থানের একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি পাকিস্তানে কোনো কারণ ছাড়াই সাতবার ভ্রমণ করেছেন। আরও রয়েছেন একজন সিম কার্ড সরবরাহকারী। তারা সবাই পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য পাচার করেছে বলে দাবি করছে ভারত।
তারা কারা?
মতি রাম জাট
এই ব্যক্তি ভারতের উচ্চ পদস্থ কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। তবে তিনি কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশে (সিআরপিএফ) তার অবস্থান এমন ভাবে তৈরি করেছিলেন যে, খুব সহজেই পাকিস্তানের স্বার্থ বাস্তবায়ন করতেন। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে জাট পাকিস্তানের গোয়েন্দা অফিসার্সের (পিআইওএস) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অর্থের বিনিময়ে তিনি তাদের তথ্য পাচার করতেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গতিবিধি সন্দেহ হওয়ায় দিল্লি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। পরে তাকে সিআরপিএফ থেকে বরখাস্ত করা হয়। আগামী ৬ জুন পর্যন্ত তাকে এনআইএ’র হেফাজতে রাখা হবে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।
প্রকৌশলী রবীন্দ্র ভার্মা
মুম্বাই ভিত্তিক একটি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রাংশ প্রকৌশল ২৭ বছর বয়সী রবীন্দ্র ভার্মাকে গ্রেপ্তার করে মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী স্কয়ার্ড (এটিএস)। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে তার প্রবেশের অনুমতি ছিল। সেখানে তিনি সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজ নিয়ে কাজ করত।
পায়েল শর্মা এবং ইসপ্রীত নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট গুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক পাওয়া যায়। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে জানা গেছে এসব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পাকিস্তানের এজেন্টদের। ভার্মা তাদের ফাঁদে পা দিয়ে ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছে নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করত।
পুলিশ জানিয়েছে, ভার্মা প্রতারিত হয়েছেন এমন নয়, তিনি জেনেশুনে স্পর্শকাতর তথ্য পাচার করতেন। যদিও নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে ফোন নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তবে তিনি ছবি অঙ্কন করে পাকিস্তানের কাছে তথ্য পাঠাতেন। বিশেষ করে জাহাজের নাম এবং এগুলোর চলাচলের তারিখ ও সময়। ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকেই সে পাকিস্তানের হয়ে কাজ করে আসছে। বর্তমানে তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
জ্যোতি মালহোত্রা
ভারতীয় এই ট্রাভেল ভ্লগারের একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাকে হরিয়ানা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই’র সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে এমন সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মালহোত্রা সরাসরি এবং একাধিকবার দিল্লিতে থাকা পাকিস্তানের হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দেশটিতে তার ভ্রমণ করার দুটি রেকর্ডও রয়েছে। তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তা দানিশ, আহসান এবং শহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার নিকট থেকে জব্দকৃত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং ১২ টেরাবাইটের ডেটা থেকে জানা গেছে তিনি আইএসআইয়ের এজেন্ট।
শাহদেব সিং গোহিল
২৮ বছর বয়সী এই স্বাস্থ্য কর্মীকে গুজরাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অবকাঠামোগত স্পর্শকাতর তথ্য পাকিস্তানে পাচার করতেন তিনি।
গুজরাটের সন্ত্রাস বিরোধী স্কয়ার্ড জানিয়েছে, সীমান্ত জেলা কচ্ছের বাসিন্দা গোহিলকে গত শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য পাচারের অভিযোগ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া রয়েছে হরিয়ানার একাধিক বাসিন্দা। তারাও অর্থের বিনিময়ে পাকিস্তানের কাছে স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ার করত।