বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় নিজেকে মনে হতো `পতিতা': মিস ইংল্যান্ড 

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জুন ২০২৫, ১৫:৩১
আপডেট  : ০২ জুন ২০২৫, ১৫:৩৫
মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় নিজেকে মনে হতো `পতিতা': মিস ইংল্যান্ড 
প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনালের আগেই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান মিস ইংল্যান্ড মিলা ম্যাগি। ছবি: সংগৃহীত

চলমান মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এক সাহসী এবং অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিয়েছেন ২০২৪ সালের মিস ইংল্যান্ড মিলা ম্যাগি।

অনুপ্রেরণাদায়ক পটভূমির জন্য পরিচিত ম্যাগির প্রতিযোগিতা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

1

‘সৌন্দর্যের উদ্দেশ্য রয়েছে’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ভারতের তেলেঙ্গানায় অনুষ্ঠিত মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার আয়োজকদের বিরুদ্ধে তিনি সম্পূর্ণ বিপরীত এক অভিযোগ তুলেছেন।

এবারের আসরে অংশ নেওয়া মিলা ম্যাগি অভিযোগ করেন, তাকে প্রতিযোগিতায় ব্যবহার করা হয়েছে কেবল ‘উইন্ডো ড্রেসিং’ হিসেবে এবং প্রতিযোগিতার নামে বিনিয়োগকারীদের মনোরঞ্জনের মাধ্যম হিসেবে।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে ম্যাগি প্রথম মিস ইংল্যান্ড খেতাবধারী হিসেবে স্বেচ্ছায় মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এটিকে নৈতিকভাবে আপোষমূলক বলে বর্ণনা করেন।

এক বিবৃতিতে তিনি আয়োজকদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগীদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে গভীর অস্বস্তি প্রকাশ করে অভিযোগ করেন যে, তাদের এখানে অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমি একজন পতিতার মতো অনুভব করতাম!’ এরপর তিনি, কীভাবে প্রতিযোগীদের ধনী পুরুষ স্পনসরদের সামনে কুচকাওয়াজ করতে এবং কেবল বিনোদন হিসেবে পারফর্ম করতে বলা হতো তা বর্ণনা করেন।

যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার পর ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান-এ এক সাক্ষাৎকারে ম্যাগি প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে জানান, এবার (২০২৫ সাল) মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিয়েছিলেন মূলত তার প্রচারিত ক্যাম্পেইন ‘গো ফর উইদ সিপিআর’কে বৈশ্বিক মঞ্চে তুলে ধরার জন্য।

এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তিনি স্কুলপাঠ্যক্রমে সিপিআর অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে একেবারেই বিপরীত।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, শনিবার (৩১ মে) ভারতের হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড ফিনালের আগেই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান মিলা।

তিনি বলেন, ‘আমাকে ও অন্য নারী প্রতিযোগীদেরকে বিনিয়োগকারীদের জন্য এক ধরনের শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। বিষয়টি ছিল শোষণমূলক।’

এদিকে, মিস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে ম্যাগির বক্তব্যকে মিথ্যা ও মানহানিকর বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, ‘তার অভিজ্ঞতার সঙ্গে এসব অভিযোগের কোনো মিল নেই।’

সংস্থাটির সিইও জুলিয়া মরলি আরও একধাপ এগিয়ে ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় বলেন, 'ম্যাগি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান; কারণ, তিনি ভেবেছিলেন, তার জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই।'

এ বিষয়ে ম্যাগি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘জুলিয়ার মন্তব্য প্রতিহিংসাপরায়ণ ও তীব্র ক্ষোভপূর্ণ। ওটা ছিল হাস্যকর। আমি জেতার সম্ভাবনা না দেখে সরে যাইনি। আমি সরে গেছি কারণ, এই প্ল্যাটফর্ম আমার বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে মানানসই ছিল না। আমি চাই না আর কোনো তরুণী আমার অভিজ্ঞতা দেখে এই ব্যবস্থায় প্রবেশ করুক।’

মিলা জানান, হায়দরাবাদের অনুষ্ঠানে বাহ্যিক হাসির আড়ালে ছিল চোখের জল। প্রতিযোগিতার প্রতিশ্রুতি ছিল ‘উদ্দেশ্যসম্পন্ন’ সৌন্দর্যের। কিন্তু বাস্তবে ছিল, প্রতিদিন নতুন গাউন পরে সাজিয়ে তোলা ও বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রদর্শনী।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এই প্রতিযোগিতার ভেতরে একটা ভ্রান্ত গল্প আছে। এটা নাকি অ্যাডভোকেসির প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রতিযোগীরা তাদের প্রচারণার বিষয় নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, আমাদের শুধু অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য রাখা হয়েছে। নিজের ক্যাম্পেইন নিয়ে বলার সুযোগ খুবই সীমিত ছিল।’

এছাড়াও ম্যাগি জানান, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অনেক নারীই তাকে ব্যক্তিগত বার্তায় সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, এমন অভিজ্ঞতা তাদেরও হয়েছে।

মিস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে আর কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান , দ্য সান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে