ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি এমন এক নজিরবিহীন হামলার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। এই বিধ্বংসী হামলাটি রাশিয়ার চারটি কৌশলগত বিমানঘাঁটিতে পরিচালিত হয় এবং এটি পরিকল্পিত ছিল একদম যুদ্ধশৈলীর আদলে—দীর্ঘ দেড় বছর ধরে। জেলেনস্কি নিজেই একে তুলনা করেছেন “রাশিয়ার পার্ল হারবার” এর সঙ্গে।
‘স্পাইডার ওয়েব’ অপারেশন
এই অভিযানটির কোডনেম ছিল “স্পাইডার ওয়েব”, যার আওতায় ইউক্রেন ১১৭টি বিস্ফোরকবাহী ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার গভীরে হামলা চালায়। এই ড্রোনগুলো কৌশলগতভাবে ট্রাকের মাধ্যমে রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করানো হয় এবং সেগুলো দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে চালানো হয়।
জেলেনস্কি বলেন, “আজ এমন একটি অভিযান সম্পন্ন হয়েছে যা কেবল শত্রু ভূখণ্ডে নয়, বরং তাদের সামরিক অবকাঠামোর প্রাণকেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে এটি ন্যায্য ও সঠিক ছিল।”
সামরিক বিশ্লেষকদের চোখে
ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সের্হি কুজান এই অভিযানের তুলনা করেন ইতিহাসের সেরা গোপন সামরিক অপারেশনগুলোর সঙ্গে। তার ভাষায়, “বিশ্বের ইতিহাসে এমন পরিকল্পিত ড্রোন হামলা আর দেখা যায়নি—দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি, লক্ষ্যবস্তুর নিখুঁত বাছাই এবং নির্বিঘ্ন কার্যকরী সম্পাদনা, সব মিলিয়ে এটি অনন্য।”
এই অভিযানে ইউক্রেন দাবি করেছে, রাশিয়ার অন্তত ৪০টি কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস হয়েছে, যা তাদের সামরিক সক্ষমতায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।
‘পার্ল হারবার’ তুলনার পেছনে
১৯৪১ সালে জাপানের আকস্মিক পার্ল হারবার আক্রমণ যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে, জেলেনস্কি তেমনি এই হামলাকে রাশিয়ার জন্য একটি ‘চোখ খুলে দেওয়া’ মুহূর্ত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে, এই অভিযান রাশিয়ার যুদ্ধক্ষমতার ‘অন্তঃস্থ জাল’ ছিন্ন করেছে, যার প্রতিক্রিয়া কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও পড়বে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পর ইউক্রেনের সাহসী উদ্যোগকে প্রশংসা করছেন পশ্চিমা সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে, রাশিয়া এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্বীকার করেনি। বরং তারা একে “সন্ত্রাসী কার্যক্রম” বলে আখ্যা দিয়েছে।
এই ড্রোন হামলা ইউক্রেনের নতুন কৌশলগত শক্তির ইঙ্গিত দিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত এই অপারেশন শুধু রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পাল্টা জবাবই নয়, বরং এটি ইউক্রেনের আত্মবিশ্বাস এবং যুদ্ধ-দূরদর্শিতারও প্রতীক হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এই হামলা রাশিয়ার জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।