যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিরুদ্ধে ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পূর্বাঞ্চলীয় স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হচ্ছে।
‘বিদেশি সন্ত্রাসীদের’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন।
যে দেশগুলির নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেগুলো হল, ইরান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, লিবিয়া, সুদান, ইয়েমেন, শাদ, কঙ্গো, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি ও সোমালিয়া।
এর পাশাপাশি আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এসব দেশ হল, লাওস, তুর্কেমেনিস্তান, কিউবা, ভেনেজুয়েলা, বুরুন্ডি, সিয়েরা লিওন ও টোগো।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, যে দেশগুলো সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে তারা ‘সন্ত্রাসীদের বড় ধরনের উপস্থিতিকে’ আশ্রয় দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল, তারা ভিসা নিরাপত্তায় সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে আর ভ্রমণকারীদের পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের অক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি এসব দেশগুলোর অপরাধমূলক রেকর্ড সংরক্ষণ অপর্যাপ্ত এবং তাদের নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র অবস্থানের হার উচ্চ।
এ প্রসঙ্গে তিনি ১ জুন কলোরাডোর বোল্ডার শহরে হওয়া হামলার কথা উল্লেখ করেন। ওই ঘটনায় এক মিশরীয় নাগরিক ইসরায়েলপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর একটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছিলেন। এই ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে এসব কারণেই নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। যদিও তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে মিশর নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদকালেও ট্রাম্প সাতটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেন, যিনি ট্রাম্পের পর ক্ষমতায় আসেন, ২০২১ সালে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন। বাইডেন এই নিষেধাজ্ঞাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় বিবেকের ওপর একটি কলঙ্ক’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
যে দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিরুদ্ধে এবার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেসব দেশের কর্মকর্তারা ও বাসিন্দারা সিদ্ধান্তটি নিয়ে হতাশা ও অবিশ্বাস জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ইরানি ও মুসলিমদের প্রতি গভীর শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ’ বলে নিন্দা করেছে তেহরান।
শাদের প্রেসিডেন্ট মাহামাত ইদ্রিস দেবি ইত্নো পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “চাদের নেই কোনও বিলাসবহুল বিমান বা বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি, কিন্তু আমাদের আছে সম্মান ও গর্ব।”
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত প্রকল্পে কাজ করা অনেকেই, যারা অন্য দেশে আশ্রয় নিয়ে আছেন, তারা এখন আর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাবেন না আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
পাকিস্তানে অবস্থানরত ৫৭ বছর বয়সী নারী অধিকারকর্মী ফাতিমা বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত এক রাতেই আমাদের আশা-ভরসা ধূলিসাৎ করেছে।”
ফাতিমাদের মতো অন্য দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা মার্কিন প্রকল্পে কাজ করা আফগানদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা দেশে ফিরতে বাধ্য হতে পারেন আর তাতে তালেবানের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের মুখে পড়তে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতারাও ট্রাম্পের এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।