বুধবার (১১ জুন) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে এক বিবৃতিতে বলেন, যদি আমাদের বিরুদ্ধে সংঘাত চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে আঞ্চলিক মার্কিন ঘাঁটিগুলো হবে আমাদের প্রতিরোধের মূল লক্ষ্য। আমরা সাহসের সঙ্গে প্রতিটি ঘাঁটি আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত। খবর আল জাজিরা।
এ হুঁশিয়ারি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে পাঁচ দফা পারমাণবিক আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী দফা বৈঠক নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। ওয়াশিংটনের ভাষ্য অনুযায়ী তা আগামী বৃহস্পতিবার, আর তেহরানের মতে বৈঠকটি আগামী রোববার ওমানে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক পডকাস্টে বলেন, দুই মাস আগেও আমি চুক্তি নিয়ে যতটা আশাবাদী ছিলাম, এখন আর ততটা নই। ইরানের ভেতরে কিছু একটা বদলেছে। আমি নিশ্চিত না, আদৌ কোনো সমঝোতা হবে কি না।
প্রথম থেকেই চুক্তি ভেস্তে গেলে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আসছেন ট্রাম্প। এর জবাবে ইরান জানিয়েছে, তারা হামলার শিকার হলে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ঘাঁটিগুলোকেই পাল্টা জবাবের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করবে।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাসিরজাদে আরও জানান, ইরান সম্প্রতি ২ হাজার কেজি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে এর ধরন বা প্রযুক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে, উত্তেজনা প্রশমনে রাশিয়া মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানান, আমরা শুধু রাজনৈতিক নয়, বাস্তব সহায়তাও দিতে প্রস্তুত। পারমাণবিক উপাদান সংগ্রহ করে তা বেসামরিক জ্বালানিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিতেও আমরা প্রস্তুত।
ইরান অবশ্য বরাবরের মতোই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র না পায়। আমরাও তাই চাই। সুতরাং এখান থেকেই যৌক্তিক একটি সমঝোতার ভিত্তি তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তির প্রধান ভিত্তি হতে হবে- আইএইএ’র পূর্ণ নজরদারিতে আমাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালু রাখা এবং পশ্চিমাদের সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
এদিকে, ভিয়েনাভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানকে নিরস্ত্রীকরণে ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করে একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, চাপের বিপরীতে তারা ‘অনুপাতিক জবাব’ দেবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ইরান ও ছয় পরাশক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমা মেনে চলার শর্তে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে সেই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন, যার পর থেকেই ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।