আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইরান তাদের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। গত দুই দশকে এই প্রথমবারের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ উঠল।
IAEA-এর পরিচালনা পর্ষদ এক প্রস্তাব পাস করেছে, যা ভবিষ্যতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পথ খুলে দিতে পারে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত IAEA-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইরান সংস্থাটির সঙ্গে যথাযথ সহযোগিতা করছে না এবং তাদের কিছু গোপন স্থানে সন্দেহজনক পারমাণবিক কার্যক্রম ও ঘোষণাবিহীন উপকরণের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন ছিল।
ইরান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে সতর্ক করে বলেছে যে, তারা যদি এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ইরান কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
এই অবস্থার ফলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা আরও জটিল হতে পারে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে যখন ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের ওই অঞ্চল ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে।
ইরান অবশ্য বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি একান্তই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত এবং তারা কখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরি বা অর্জনের চেষ্টা করেনি।
২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তিতে ইরান ছয়টি বিশ্বশক্তির সঙ্গে একমত হয়েছিল, যে তারা তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত রাখবে এবং IAEA-কে ব্যাপক পরিদর্শনের সুযোগ দেবে। এর বদলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে তারা কিছুটা মুক্তি পায়।
কিন্তু ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান চুক্তির বেশ কিছু শর্ত লঙ্ঘন করতে শুরু করে, বিশেষ করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের ক্ষেত্রে।
IAEA-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে প্রায় ৪০৮ কেজি ইউরেনিয়াম ৬০% বিশুদ্ধতায় সংরক্ষণ করছে, যা অস্ত্র তৈরির মাত্রার কাছাকাছি। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে প্রায় ৯টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি যে ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা আরও স্পষ্ট হলো।