আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যের গর্ভপাত আইন ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এমন এক সময়ে দেশটির অভ্যন্তরে গর্ভপাত বিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে, যার পেছনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বার্মিংহামের মূল চত্বরে সম্প্রতি গর্ভপাত বিরোধী একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন। মোমবাতি হাতে ও স্তোত্র গেয়ে তারা গর্ভপাত বন্ধের দাবি জানান। যদিও যুক্তরাজ্যের প্রায় ৯০% মানুষ গর্ভপাতের পক্ষে (pro-choice), তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে একটি ছোট, কিন্তু সংগঠিত গোষ্ঠী তাদের কণ্ঠস্বর জোরালো করছে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গর্ভপাত বাফার জোন আইনগুলির সমালোচনা করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। বাফার জোন হলো ক্লিনিকের বাইরের নির্দিষ্ট এলাকা, যেখানে পুলিশ গর্ভপাত ক্লিনিকে প্রবেশকারী নারীদের হয়রানি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে পারে।

ভ্যান্স ইসাবেল ভন-স্প্রুস নামের এক আজীবন গর্ভপাতবিরোধী কর্মীর ঘটনা উল্লেখ করেন, যাকে ২০২২ সালে একটি ক্লিনিকের বাইরে 'নীরব প্রার্থনার' জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও পরে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয় এবং তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় ক্ষতিপূরণও পান।

ইসাবেল ভন-স্প্রুস বলেন, "তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি কী করছি, এবং আমি বলেছিলাম, আমি শুধু শারীরিকভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমি হয়তো মনে মনে প্রার্থনা করছি, কিন্তু জোরে কিছু বলছি না। এই ভিত্তিতেই তারা আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল।" তিনি মনে করেন, গর্ভপাত কেন্দ্রগুলো 'আধুনিক যুগের ক্যালভারির' মতো, যেখানে 'নির্দোষদের হত্যা করা হচ্ছে'।

তবে লন্ডনের একটি ক্লিনিকে কর্মরত এইলিশ ম্যাকএনটির মতে, যেকোনো ধরনের প্রতিবাদই একটি 'বিভ্রান্তি', যা ক্লিনিকে আসা নারীরা চান না। তিনি আশা করছেন যে, সংসদ সদস্যরা এই সপ্তাহে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতকে অপরাধমুক্ত করার জন্য একটি সংশোধনী পাস করবেন। তিনি মনে করেন, বিশেষ করে রো বনাম ওয়েডের রায় বাতিল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবার নির্বাচনে জয়লাভের পর গর্ভপাতবিরোধী বক্তব্য আরও বেড়েছে।

স্কাই নিউজ এবং ইউগভের জনমত জরিপ অনুসারে, যুক্তরাজ্যের ৫৫% মানুষ ২৪ সপ্তাহের আগে মহিলাদের নিজেদের গর্ভপাতের জন্য ফৌজদারি ব্যবস্থা বাতিলের আইন পরিবর্তনের পক্ষে। তবে, আশ্চর্যজনকভাবে, ২২% মনে করেন যে ২৪ সপ্তাহের পরে গর্ভপাতের জন্য মহিলাদের তদন্ত বা কারাবন্দী করা উচিত।

সংসদ সদস্য স্টেলা ক্রিসি, যিনি গর্ভপাতকে অপরাধমুক্ত করার জন্য সংশোধনী পেশ করছেন, বলেন, "আর কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই যা এভাবে ফৌজদারি ভিত্তি নিয়ে কাজ করে। এর বাস্তব পরিণতি রয়েছে।" তিনি বলেন, অনেক সময় গর্ভবতী না জানা সত্ত্বেও দেরিতে গর্ভপাত হওয়া দুর্বল নারীদের হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তার মুখোমুখি হতে হয়, পরামর্শকের বদলে। তাদের মাস বা বছর ধরে সন্দেহের শিকার হতে হয়, যা ব্রিটিশ জনগণের মনোভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে তিনি মনে করেন।

এই বিতর্কিত বিষয়টি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা তৈরি করছে।

সূত্র: স্কাই নিউজ