মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ইরানকে ফের আলোচনার টেবিলে আনতে জোর প্রচেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে পারমাণবিক কর্মসূচিতে ৩ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও বিদেশি ব্যাংকে আটকে থাকা ইরানের অর্থ ছাড় দেয়ার মতো একাধিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্রের বরাতের এসব তথ্য জানিয়েছে সিএনএন ।
সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল সংঘাত ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার মধ্যেও, আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে সংলাপের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সূত্রগুলো।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, আলোচনায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে। সেগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে।
তবে একটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপসহীন। ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। যদিও তেহরান বরাবরই বলে আসছে, এটি তাদের জন্য প্রয়োজন।
আলোচনার একটি খসড়া প্রস্তাব সামনে এসেছে, যেখানে তেহরানকে আকৃষ্ট করতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বেসামরিক ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধিকরণবিহীন একটি পারমাণবিক প্রকল্পে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও বিদেশে আটকে থাকা ৬০০ কোটি ডলারের অর্থ ছাড় দেয়ার প্রস্তাব।
প্রস্তাবিত এই অর্থের পুরোটা যুক্তরাষ্ট্র দেবে না, বরং সৌদি আরব ও উপসাগরীয় মিত্রদের কাছ থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে অংশ নেন মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ও উপসাগরীয় মিত্র রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা।
আলোচনায় বিবেচনাধীন অন্য একটি প্রস্তাব সামনে এসেছে। যেখানে সম্প্রতি বাংকার-বাস্টার বোমায় ধ্বংস হওয়া ফোরদু পারমাণবিক কেন্দ্রকে সরিয়ে তার জায়গায় নতুন একটি 'নন-এনরিচেবল' পারমাণবিক স্থাপনা গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে সেটি ইরান পরিচালনা করবে কিনা বা আদৌ পরিকল্পনাটি কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।
আলোচনা সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, 'বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের প্রস্তাব উঠে আসছে। অনেকেই বেশ ব্যতিক্রমী সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন।'
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম পাঁচ দফার আলোচনা সম্পর্কে অবগত অপর একটি সূত্র বলেছে, 'শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে, তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত বলেই আমার মনে হয়।'
ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিফ উইটকফ। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সার্বিক শান্তি চুক্তি করতে চাই‘।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, সবগুলো প্রস্তাবের লক্ষ্য একটাই—ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য জনসমক্ষে এই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
তবে প্রশাসনের অনেকেই বিশ্বাস করেন, একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হলে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরান চাইলে শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে পারে। কিন্তু সেই কর্মসূচির জন্য তারা নিজেরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব দিয়েছে, এর পরিবর্তে ইরান চাইলে বিদেশ থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানি করতে পারে। উইটকফ বলেন, এই সম্ভাব্য কর্মসূচি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মডেলের মতো হতে পারে।
ইরানের সামনে প্রস্তাবের খসড়া উপস্থাপন করার সুযোগ আসতে পারে মার্কিন প্রশাসনের। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বলেছেন, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠকে বসবে।
তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেছেন, আগামী সপ্তাহে কোনো আলোচনার বিষয়ে তিনি অবগত নন। পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্তরাও বলেছেন, খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে এখনও কাজ চলছে।
গোপন বৈঠকে গৃহীত শর্তাবলি নিয়ে গত কদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে—মূলত কাতারের মধ্যস্থতায়—আলোচনা চলছে।
কাতারই ইরান-ইসরাইলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির মূল মধ্যস্থতাকারী ছিল। ভবিষ্যতে যাতে ফের সংঘাত শুরু না হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে উদ্যোগ নিয়েছিল দেশটি।