শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ছাত্র সংগঠনের অফিসে প্রেম নিবেদন, রাজি না হওয়ায় ধর্ষণ নেতার

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ জুন ২০২৫, ২৩:৩২
ছাত্র সংগঠনের অফিসে প্রেম নিবেদন, রাজি না হওয়ায় ধর্ষণ নেতার
প্রতীকী ছবি

কলকাতার একটি কলেজ ক্যাম্পাসে ওই কলেজেরই এক ছাত্রীকে গণ-ধর্ষণের অভিযোগ সামনে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। প্রত্যেকেই কলেজটির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এদের অন্তত একজনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র শাখার যোগ ছিল বলে স্বীকার করেছে ওই সংগঠনের নেতৃত্ব।

পুলিশ বলছে, দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজ নামের ওই আইন কলেজের ক্যাম্পাসেই ছাত্রীটিকে গণ-ধর্ষণ করা হয় গত ২৫ শে জুন।

পরের দিন, বৃহস্পতিবার ছাত্রীটি স্থানীয় কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করার সঙ্গে সঙ্গেই তার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয় এবং প্রথমে দুজনকে সন্ধ্যায় এবং আরেকজনকে মাঝরাতে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতদের শুক্রবার আদালতে তোলা হলে চারদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে তাদের।

জাতীয় মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রহাটকর এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আইন অনুযায়ী যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আবার কলেজটি যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, সেখান থেকেও তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টিতে রাজনীতির রঙও লেগেছে।

কী হয়েছিল?

পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ পত্রে আইনের ছাত্রী ওই নির্যাতিতা জানিয়েছেন যে, ২৫শে জুন তিনি কলেজে গিয়েছিলেন ফর্ম ভর্তি করতে। তিনি নিজেও যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সেটাও লেখেন তিনি।

কলেজের কাজ শেষ হওয়ার পরে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে অনেকেই ছিলেন। বিকেলের দিকে সকলে ধীরে ধীরে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করলে তিনিও বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। তবে তাকে তখন আরও কিছুক্ষণ থেকে যেতে বলেন ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা।

কিছুক্ষণ পরে তাকে 'প্রেমের প্রস্তাব' দেন ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত, যাকে ওই ছাত্রীটি চিহ্নিত করেছেন কলেজে তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের অন্যতম প্রধান নেতা বলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, লিখিত অভিযোগে নির্যাতিতা ছাত্রী জানিয়েছেন যে তার নিজের প্রেমিক আছে, তাই প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি।

সন্ধ্যা নাগাদ ছাত্র ইউনিয়নের কার্যালয় থেকে অন্যান্যরা বেরিয়ে যান, তবে তাকে আটকিয়ে দেন প্রধান অভিযুক্ত। সঙ্গে দুজন সহ অভিযুক্তও ছিলেন।

সেখানেই দরজা বন্ধ করে প্রথমে শারীরিক নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করা হয়, এবং পরে কলেজের নিরাপত্তা রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন ওই নির্যাতিতা। মারধর এবং হুমকিও দেওয়া হয়।

তার অভিযোগ যে কলেজের নিরাপত্তা রক্ষীর কাছে সাহায্য চেয়েও পান নি তিনি।

শেষে রাত ১০টা ৫০ নাগাদ তিনি কোনোভাবে কলেজ থেকে বেরিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পরের দিন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।

কারা অভিযুক্ত?

পুলিশ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ধৃতদের মধ্যে একজন ওই কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র এবং অন্য দুজন বর্তমান ছাত্র।

সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই প্রাক্তন ছাত্রকে কলেজেই সাময়িক ভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল।

এই ব্যক্তির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতা নেত্রীর ছবি দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জানাচ্ছে। সেই ব্যক্তি যে কলেজটির তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের প্রধান ছিলেন, সেটি নির্যাতিতাও উল্লেখ করেছেন তার বয়ানে।

তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন অবশ্য অস্বীকার করে নি ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা।

সংগঠনের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "কোনো এক সময়ে, সে যখন ছাত্রাবস্থায় ছিল, সে দক্ষিণ কলকাতা জেলার সবচেয়ে নিম্ন পোস্ট, যেখান থেকে ভবিষ্যতের ছাত্রনেতাদের আমরা তুলে আনি, তাকে অর্গানাইজেশন সেক্রেটারি করেছিল আমাদের জেলা সভাপতি।

"এখন যদি আমাদের প্রশ্ন করেন যে ২০১৯ সালে কেন তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছিল, আমি আপনাদেরকে স্বীকার করে নিচ্ছি যে আমাদের ব্যর্থতা যে জ্যোতিষ বিদ্যা জানি না, তাই বুঝে উঠতে পারি নি যে ২০২৫ সালে যদি সে এই ঘটনা করে থাকে, সে এটা ঘটাবে," বলছিলেন মি. ভট্টাচার্য।

তৃণমূল কংগ্রেসের মূল দলটির মুখপাত্র কুনাল ঘোষ, সংসদ সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জী, বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জী সহ সকলেই ধৃতদের দলীয় পরিচয় না দেখে চরম শাস্তি দাবি করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, "আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই মর্মান্তিক ধর্ষণের নিন্দা জানাই। কলকাতা পুলিশ খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তিনজন অভিযুক্তের প্রত্যেককে গ্রেফতার করেছে।"

এই গণধর্ষণের ঘটনা সামনে আসতেই কলকাতায় বিক্ষোভ দেখাতে নেমে পড়ে বিভিন্ন বিরোধী সংগঠন।

বিরোধী দল বিজেপির বিধায়ক লকেট চ্যাটার্জী জানিয়েছেন, "এখন ধর্ষণ, গণ-ধর্ষণ পশ্চিমবঙ্গের একটা ব্যধি। এই ব্যধি ক্যান্সারের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ সবাই জানে যে এটার কোনোরকম কেউ শাস্তি পাবে না।

আরজি করের ঘটনার একবছর পূর্ণ হবে, তারই বর্ষপূর্তিতে আরেকটা এরকম গণ-ধর্ষণ এবং তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত টিএমসিপির নেতারা। ভেবে দেখুন ভবিষ্যতে আমাদের মেয়েদের কোন কলেজে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবেন।"

বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন মিছিল করেছে, বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

সিপিআই এমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে অভিযোগ করেন, "প্রধান অভিযুক্ত কালীঘাটের পরিচিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। তার পরেও ওই কলেজে তাকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।" বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে