ব্যাপক তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ। গত কয়েক দিন ধরে দক্ষিণ ইউরোপের চার দেশ ইতালি, স্পেন, গ্রিস ও পর্তুগালের অধিকাংশ এলাকায় দিনে তাপমাত্রা থাকছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।
ইউরোপীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাপপ্রবাহের প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বর্তমানে যে গতিতে এবং হারে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে ঘন ঘন এবং দীর্ঘ তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে।
খর রৌদ্র এবং প্রচণ্ড গরমে এই চার দেশের বাসিন্দা এবং সেসব দেশের যাওয়া পর্যটকরা স্বাভাবিকভাবেই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তাদেরকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তাপপ্রবাহে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পর্তুগালের। ৯২ হাজার ২৩০ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির দুই তৃতীয়াংশ এলাকায় তাপপ্রবাহ ও দাবানল সংক্রান্ত উচ্চসতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজধানী লিসবনে প্রতিদিন তাপমাত্রা ছুঁচ্ছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর।
রেকর্ডভাঙ্গা গরমের কারণে ইতালির লাজিও, তুস্কানি, কালাব্রিয়া, পুগ্লিয়া, উম্ব্রিয়া এলাকার স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ দিনের উষ্ণতম ঘণ্টাগুলোতে আউটডোর কাজে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
দেশটির শ্রমিক সংঘঠনগুলো এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে এবং দেশজুড়ে এই নিয়ম জারি করার দাবি জানিয়েছে।
রোববার ইতালির কেন্দ্রীয় সরকার রাজধানী রোম, মিলান ও নেপলসসহ মোট ২১টি দেশে উচ্চসতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রোমে পর্যটকরা প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে শহরের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট কলোসিয়াম ও ত্রেভি ঝরনার কাছাকাছি ছায়াযুক্ত স্থানগুলোতে জড়ো হয়েছেন। সবাই ছাতা মেলে রেখেছেন এবং ঠান্ডা থাকতে পানি পান করছেন।
দীর্ঘ ও ব্যাপক তাপপ্রবাহের কারণে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের দক্ষিণাঞ্চলে গত বৃহস্পতিবার দাবানল শুরু হয়েছে। ১২টি হেলিকপ্টার, ১২টি বিমান এবং ১৩০ জন দমকল বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেও এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি দাবানল।
গত এক সপ্তাহ ধরে স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা প্রায় প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এর আগে কখনও এতদিন একটানা তাপপ্রবাহ দেখনি স্পেন।
গরমে সেখানকার বাসিন্দা ও পর্যটকরা প্রায় দিশেহারা অবস্থায় পৌঁছেছেন। স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ লোকজনকে দিনের উষ্ণতম ঘণ্টাগুলোতে বাইরের কাজ না করা এবং প্রচুর পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, যদি দক্ষিণ ইউরোপে নিয়মিত এমন তাপপ্রবাহ দেখা দেয়, তাহলে এই অঞ্চলে গরমজনিত অসুস্থতা ও হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর হার চারগুণ বৃদ্ধি পাবে।