মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২
যুদ্ধ ও সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯ দেশে দারিদ্র্য বাড়ছে

১০০ কোটির বেশি মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুন ২০২৫, ১৯:৩৭
১০০ কোটির বেশি মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি
ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধ ও সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি দেশে চরম দারিদ্র্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পাশাপাশি এসব দেশের ১০০ কোটির বেশি মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এসব দেশের অর্থনীতি দুর্বল করে দিয়েছে এবং মানুষের আয় কমে গেছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এসব দেশে মাথাপিছু আয় প্রতি বছর গড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে কমেছে। অন্যদিকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে মাথাপিছু আয় গড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোয় বৈষশ্য বেড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোয় খাদ্য সংকট আরো তীব্র হচ্ছে।

বর্তমানে সংঘাতকবলিত এলাকায় দৈনিক ৩ ডলারের কম আয়ে বেঁচে আছে প্রায় ৪২ কোটি ১০ লাখ মানুষ। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে ৪৩ কোটি ৫০ লাখে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে, যা বিশ্বব্যাপী চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব যুদ্ধ-সংঘাতে মানবিক ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের আগে সংঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমছিল। কিন্তু এরপর তা আবার বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে সংঘাতে তিন লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল বলেন, গত কয়েক বছর বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ছিল ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের দিকে। কিন্তু বাস্তবে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ৭০ শতাংশই আফ্রিকায়। এসব সংকট যদি অবহেলিত থাকে, তাহলে তা স্থায়ী রূপ নিতে পারে। বর্তমানে যেসব দেশে সংঘাত চলছে, তাদের অর্ধেকই ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থায় রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৯টি দেশের মধ্যে ২১টি এখনো সংঘাত ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় মাত্র ১ হাজার ৫০০ ডলার, যা ২০১০ সাল থেকে তেমন বাড়েনি। অন্যদিকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৯০০ ডলার।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এসব সংঘাতপীড়িত দেশে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী বা মিলিশিয়ায় যোগ দিচ্ছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, এ ৩৯ দেশে প্রায় ২৭ কোটি কর্মক্ষম মানুষ রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কর্মসংস্থান আছে অর্ধেকেরও কম মানুষের। এতে তরুণদের বড় একটি অংশ বেকার অবস্থায় রয়েছে, যা সহিংসতা ও অস্থিরতা আরো বাড়াতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ এম আয়হান কোসে বলেন, এ দেশগুলোর প্রতি বৈশ্বিক মনোযোগ বাড়াতে হবে। কারণ সঠিক নীতি ও আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধ, সুশাসন জোরদার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সম্ভব।

বিশ্বব্যাংক উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন যুদ্ধ ও সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আরো বেশি আর্থিক সহায়তা দেয় ও বিনিয়োগ করে। এসব দেশের সংঘাত বন্ধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি। উন্নত দেশগুলোর সহায়তা ছাড়া এসব দুর্বল অর্থনীতির পুনর্গঠন সম্ভব নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে