বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

মঙ্গোলিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা কম কেন

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:১৫
মঙ্গোলিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা কম কেন
ফাইল ছবি

পূর্ব এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশ মঙ্গোলিয়া। এর উত্তরে রাশিয়া এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে চীন অবস্থিত। দেশটির মোট আয়তন ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ১১৬ বর্গকিলোমিটার। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭০ জন। মঙ্গোলিয়া পর্বতসংকুল দেশ হলেও এখানে আছে বিস্তীর্ণ চারণভূমি, দীর্ঘ নদী ও বিশাল মরুভূমি। দেশটির অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। মঙ্গোলিয়ার ৩৮ শতাংশ মানুষ রাজধানী শহর উলানবাটরে বাস করে। দেশটির বেশির ভাগ মানুষ বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী। ধর্মে বিশ্বাস রাখে এমন লোকদের ভেতর মুসলিমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম। পিউ রিসার্চের মতে, মঙ্গোলিয়ায় মুসলমানের হার ৪.৪ শতাংশ। তবে কোনো কোনো সূত্রে ৫-৬ শতাংশও উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামের আগমন : মঙ্গোলিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় দশম শতকে, যখন পারস্য ও মধ্য এশিয়ায় সামানিদ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এই অঞ্চলের সঙ্গে মুসলমানের জোরালো সম্পর্ক তৈরি হয় খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে। সে সময় মুসলিম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কাজাক ও উইঘুর সম্প্রদায়ের ভেতর ইসলাম বিস্তার লাভ করে। এ ছাড়া মঙ্গোলিয়ায় ইসলাম প্রসারে একাধিক খানাতের ইসলাম গ্রহণ এবং মধ্য এশিয়া থেকে আফগানিস্তান ও ভারতবর্ষে মুসলিম বিজয়েরও প্রভাব রয়েছে।

মঙ্গোলিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা কম কেন যদিও প্রায় হাজার বছর আগে মঙ্গোলিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটেছে, তবে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা তুলনামূলক কমই থেকে গেছে। ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্ত্বিকরা এর পেছনে কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। তা হলো :

১. রাজনৈতিক বিরোধ : মঙ্গোল নেতা হালাকু খানের হাতে আব্বাসীয় খেলাফতের পতন ঘটে। হালাকু খান ইসলামী খেলাফতের রাজধানী বাগদাদসহ মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। আবার আইনে জালুতের যুদ্ধে মামলুকদের হাতে মঙ্গোলীয়দের বিপর্যয় ঘটে; এমনকি মুসলিম হওয়ার পর হালাকু খানের চাচাতো ভাই বারকি খান মঙ্গোলদের ধ্বংসযাত্রা থামিয়ে দেন। মঙ্গোলীয়রা মুসলিম বিশ্বে নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চালায় আর মুসলিমরা তাদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন শেষ করে দেয়। ফলে পারস্পরিক যে রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি হয় তা মঙ্গোলীয়দের ইসলাম গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

২. মানসিক দূরত্ব : মঙ্গোলীয়রা প্রাচীনকাল থেকেই স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ধর্মীয় বা কোনো আইনি বাধ্যবাধকতায় তারা বিশ্বাসী নয়। বিপরীতে ইসলাম মানুষকে একটি অনুগত ও সুশৃঙ্খল জীবনের প্রতি আহ্বান জানায়। ফলে ইসলামের সঙ্গে মঙ্গোলীয়দের একটি মানসিক দূরত্ব থেকেই যায়। এখনো মঙ্গোলিয়ার ৪০.৬ শতাংশ মানুষ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না।

৩. ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য : মঙ্গোলিয়ার পর্বতসংকুল দুর্গম ভূমিতে বহিরাগতদের যাতায়াত খুব সহজ নয়। ফলে এই অঞ্চলে মুসলিম ধর্মপ্রচারকরা তাঁদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেননি।

৪. সোভিয়েত শাসন : গত শতাব্দীর শুরুর দিকে মঙ্গোলিয়ায় সোভিয়েত শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মুসলমানরা ব্যাপক বিধি-নিষেধের মধ্যে পড়ে। এ সময় বেশির ভাগ ইসলামী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বহু নেতৃস্থানীয় মুসলিম ও ধর্মীয় নেতারা দেশত্যাগে বাধ্য হন। রাষ্ট্রের এই বৈষম্যপূর্ণ ও নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে মুসলমানের হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা : সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর মঙ্গোলিয়ায় মুসলমানের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৯৯ সালে ‘জমিয়তে মুসলিম মঙ্গোলিয়া’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশটিতে সংগঠনের ২৩টি শাখা রয়েছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘ইত্তেহাদু মুসলিম মঙ্গোলিয়া’। মূলত ইত্তেহাদে মুসলিমই মঙ্গোলিয়ার মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। বর্তমানে মঙ্গোলিয়ায় সরকার স্বীকৃত মসজিদের সংখ্যা ১৭৬টি এবং মাদরাসার সংখ্যা ২০টি। মসজিদগুলোর মধ্যে হুহট গ্রেট মসজিদই সর্ববৃহৎ। চার শ বর্গমিটার আয়তনের মসজিদটি ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে কিং সাম্রাজ্যের সময় নির্মিত হয়। বাউতু মসজিদ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। মঙ্গোলিয়ায় অবস্থিত মসজিদ-মাদরাসাগুলোর বড় একটি অংশ তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তানের আলেমরা পরিচালনা করেন।

মঙ্গোলিয়ায় ইসলামী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিভিন্ন আরব দেশ, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সাহায্য সংস্থা এবং বিশেষভাবে তুরস্ক সরকার ও তুর্কি সংস্থাগুলোর সহযোগিতা আছে। ২০১৩ সালে তুর্কিদের সহায়তায় ইসলামিক সেন্টার, উলানবাটর প্রতিষ্ঠিত হয়। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান সেন্টারটি উদ্বোধন করেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে