সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকিরের তাগিদ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৭
প্রতিকী ছবি

উন্নত মানবিক গুণাবলি অর্জনের মাস রমজানুল মুবারকের আজ পঞ্চদশ দিবস। এদিন মুমিন মুসলমানরা নামাজ, যিকিরসহ নানা ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে সর্বোচ্চ স্মরণ করার চেষ্টা করছেন। আল্লাহর পবিত্র নামের যে বরকত ও লযযত এবং স্বাদ ও আনন্দ রয়েছে তা গ্রহণে মশগুল রয়েছে।

পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। কারণ আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহর স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং শরিয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে।

আল্লাহর যিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ। আবু ওসমান নাহদি রাহ. বলেন, কুরআন মজিদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাঁকে স্মরণ করেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং শোকর গোযারি করো, না-শোকরি করো না।-সূরা বাকারা : ১৫২

সুতরাং আমরা যখন আল্লাহর যিকিরে মশগুল হই তখন একথা স্মরণ করা কর্তব্য যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও আমাদেরকে স্মরণ করছেন। এতে যিকিরের স্বাদ ও লযযত বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

কুরআন মজিদে আল্লাহতাআলা বলেন, আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। -সূরা আনফাল : ৪৫

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ : ২৮)

কুরআনে আরও বলা হয়েছে, যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। (সূরা আনফাল : ২)

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে।’ (সূরা হজ্ব : ৩৫) কুরআনের সূরা আহযাব-এ বলা হয়েছে আল্লাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও যিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।

মুমিনদের সম্পর্কে বলেছেন, যারা আল্লাহতাআলাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান যমিন সৃষ্টির বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। (সূরা আলে ইমরান : ১৯৯)

মুনাফিকদের বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে, যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন তারা শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সূরা নিসা : ১৪২) উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করতেন। (সহিহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা ৪)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতাআলা বলেন, আমি বান্দার সাথে ঐরূপ ব্যবহার করি যেরূপ সে আমার প্রতি ধারণা রাখে। সে যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে থাকি। সে যদি আমাকে অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করে তবে আমি তার চেয়ে উওম মজলিসে তার আলোচনা করি। (সহিহ বুখারি ২/৭৪০৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৫)

হযরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে তার প্রতিপালককে স্মরণ করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত হল জীবিত ও মৃতের মতো। অর্থাৎ যে আল্লাহকে স্মরণ করে সে জীবিত। আর যে স্মরণ করে না সে মৃত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭; মুসলিম, হাদিস : ৭৭৯)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পথে জুমদান পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে চলছিলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা চলতে থাক এই যে জুমদান পাহাড়। মুফাররিদরা অগ্রগামী হয়েছে। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুফাররিদরা কারা? তিনি বললেন, ওইসব নারী ও পুরুষ, যারা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৬)

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে