রোববার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
  ২৯ জুন ২০২৫, ১৮:৩২
লক্ষ্মীপুরে জামায়াত কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
মেহেদী হাসান তুষার: ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের মামলার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে মেহেদী হাসান তুষার নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই যুবক নিজেকে জামায়াত কর্মী দাবি করলেও জামায়াত বলছে তুষার জামায়াতের কেউ নন। এমন ঘটনায় শহর জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

তুষার লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ডের বাহার ভেন্ডারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অপহরণ, মামলার হুমকি, চাঁদা দাবি, জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি শরিফুল ইসলাম নামের এক কৃষকলীগ নেতাকে মামলার হুমকি দিয়ে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করের তুষার। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে শরীফুল ইসলাম বলেন, তুষার বিভিন্ন সময় সমন্বয়ক ও শিবির পরিচয় দিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন। তিনি আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন, মামলা দেবেন বলে ব্ল্যাকমেইল করেছেন এবং হুমকি ধমকি দিচ্ছেন।’

এছাড়াও অভিযুক্ত তুষার লক্ষ্মীপুর বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে হয়রানি করছেন। তবে তার অভিযোগটি স্যোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ হলে শহর জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

তবে ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার একদিন পর শরীফুল ইসলাম তার পূর্ববর্তী বক্তব্যটি প্রত্যাহার করে বলেন, ‘তুষারের সঙ্গে একটি সমস্যা ছিল। তাই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বক্তব্য দিয়েছি। পরে বিষয়টি সমাধান হলে ভিডিও প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করি।’

অন্যদিকে তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ করেন সাবেক স্কুল শিক্ষক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাহার ভেন্ডারের ছেলে তুষার কয়েকটা মোটর সাইকেল নিয়ে এসে বাগবাড়ি এলাকা থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যান।

রসুলগঞ্জ থেকে আরও ভেতরের নদীর পাড়ে আমাকে ৪ঘন্টা আটক রেখে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আদায় করেন তুষার।

কথা ছিলো আমাকে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু ছেড়ে না দিয়ে লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যানিকেতনের সামনে এনে পুলিশ ডেকে তুলে দেন। এ ঘটনায় আমার স্ত্রী স্কুল শিক্ষক হাসিনা আক্তার বাদী হয়ে তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন। সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। আমাকে হয়রানি ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তুষারের বিচার কামনা করি।’

এদিকে ১৩০জনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার বিভিন্ন ব্যক্তির হোয়াটসএ্যাপে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে আতকিংত রয়েছে অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন এটি চাঁদাবাজির জন্য করা হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে এ তুষার।

তারা আরও বলেন, তুষার বিভিন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন মামলায় নাম অন্তভুক্তি করে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে অনেকেই বাধ্য হয়ে টাকা প্রদান করেন। তুষারের ভয়ে এসব বিষয়ে কেউই মুখ খুলছেন না। সবাই এর প্রতিকার চাইছেন।

প্রবাসী ওমর ফারুকের ছেলে আহমেদ ফাহাদ বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর বাজারের ভেন্ডার বাড়ির সামনে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত আমরা দোকানঘর ভোগ-দখল করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি তুষার ও তার বাবা জোরপূর্বক আমাদের দোকান দখল করে নেন। আমার বাবা অসুস্থ হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এছাড়া থানা-পুলিশ করেও কোন লাভ হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন তুষার। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে মেহেদী হাসান তুষার বলেন, ‘আমি জামায়াত নেতা বা কর্মী সেটা সময়ের পরিপেক্ষিতে দেখা যাবে। তবে এজাহারের বিষয়ে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাছাড়া অন্য যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তাও মিথ্যা। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার করছে।’

লক্ষ্মীপুর পৌর জামায়াতের আমীর আবুল ফারাহ নিশান বলেন, ‘তুষারের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ শুনেছি, তবে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। এছাড়া সে জামায়াতের কেউ না। সে জামায়াতের কর্মীও না, কোনো দায় দায়িত্বেও নেই। সে যদি জামায়াতের নাম ব্যবহার করে কোন অপকর্ম করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক বলেন, ‘যে এজাহারটি ঘুরপাক খাচ্ছে তা ভুয়া। এছাড়া চাঁদা দাবির বিষয়ে আমাদের কাছে এমন কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থ নেব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে