২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় দেশ হারায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। তবে ১৫ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার বিচার । তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, এবছরই মামলাটির বিচার শেষ হবে। আসামিপক্ষ বলছে, হত্যা মামলায় অনেক আসামি খালাস পেয়েও বিস্ফোরক মামলার কারণে তারা জেলে আছেন। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তারা মুক্তি পাবেন।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ম আদালতের রায় এবং ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি হয়। হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিল ডিভিশনে শুনানির জন্য রয়েছে হত্যা মামলাটি। এ ঘটনার বিস্ফোরক আইনে করা মামলা এখনো বিচারাধীন।
রাজধানীর বকশিবাজারের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ২৭৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামি ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
মামলা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘হত্যা মামলার বিচারের রায় আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে ওই মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আছে। আর বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২৭৩ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আর ১৫০ থেকে ১৭৫ জনের সাক্ষ্য বাকি আছে। প্রতিমাসে এ মামলার ৪ দিন করে শুনানি করা হচ্ছে। আগামী ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ রয়েছে। আশা করছি, এ বছরের মধ্যেই আমরা বিচার শেষ করতে পারবো।’
বিচার বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘মাঝখানে করোনার জন্য তিন বছর চলে গেছে। এছাড়া হত্যা মামলার নিষ্পত্তির সঙ্গে আসামিপক্ষ এ মামলার বিচারকাজ পেছাতে বার বার আবেদন করেন। এজন্য সময় লাগছে।'
তবে ভিন্ন কথা বলছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বিস্ফোরক মামলাটি দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি হোক। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলায় সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। এজন্য বিচারে ধীরগতি। অন্যদিকে আসামিরা জামিনও পাচ্ছে না। অনেকে নির্দোষ হয়েও সাজা খাটছেন। এর আগে হত্যা মামলাটিতে ২৭৭ জন খালাস পেয়েছে, আশা করি বিস্ফোরণ মামলাটিতেও তারা খালাস পাবে।’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দাবি-দাওয়ার নামে পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান বিদ্রোহ শুরু করে। এ সময় তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।
পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিডিআরের নাম, লোগো ও পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এ বাহিনীর নাম পাল্টে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। পরিবর্তন করা হয় বাহিনীর আইন। এদিকে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে প্রথমে চকবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।
২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় চার্জগঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলায় চার বছর ৮ মাসে ২৩২টি কার্যদিবস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা হয়।
রায়ে ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময় কারাগারে থাকা দুজন মারা যান। খালাস পান ১২ আসামি।
যাযাদি/এস