যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ‘টাইম ম্যাগাজিন’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘Sheikh Hasina and the Future of Democracy in Bangladesh’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সত্তরোর্ধ্ব শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত এক নাম। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে একজন ‘বিস্ময়কর রাজনৈতিক নেতা’ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক চার্লি ক্যাম্পবেল গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেন। ওই সাক্ষাৎকার ও সার্বিক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন বিস্ময়কর রাজনৈতিক নেতা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি গত এক দশকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুততম বর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাপক উত্থান ঘটিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জিডিপির হার, মাথাপিছু আয়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সমুদ্রসীমা জয়, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ, মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ১০ মেগা প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড। এর আগেও তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সময়ের হস্তক্ষেপকারী সামরিক শক্তি এবং ইসলামপন্থিদের মোকাবিলা করে কৃতিত্বের সঙ্গে দীর্ঘ এই সময় তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ হাসিনার আমলেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক সাফল্য প্রশংসনীয় উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে জিডিপি ৭১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এর মাধ্যমে খাদ্য সংকটের দেশ খাদ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়ে উঠেছে।
বিগত সময়ে শেখ হাসিনাকে ১৯ বার গুপ্তহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশিবার নির্বাচনে জয়ী শেখ হাসিনা আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে আবারও জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের বক্তব্য যুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী এ কারণে যে, আমার দেশের জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তারা আমার প্রধান শক্তি। ’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সদস্য নিয়োজিত করার ক্ষেত্রে সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ সর্বাগ্রে। দেশটি নিয়মিতভাবে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস উল্লেখ করে এতে বলা হয়, বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির শীর্ষ দেশও যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে রুশি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা জানানো কয়েকজন উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতার একজন শেখ হাসিনা নিজেকে পশ্চিমাদের জন্য দরকারি প্রমাণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
যাযাদি/ এসএম