‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল এক লাখ টাকা’- ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর লেখা এমন পোস্ট নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।
এদিকে ওই পোস্টের প্রতিবাদ জানানোর পর এবার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক বলেন, ‘যে ঘটনা হাসনাত আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তুলে এনেছেন- এ বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি। অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আরও অনেক বিষয় এখানে আসবে।’
কোন বিষয়টি আপনারা অনুসন্ধান করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ভিডিও ক্লিপস- ওই ভিডিও ক্লিপসের বিষয় নিয়ে আমরা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর আগে গত, ২৪ জুন ফেসবুক পেস্টে হাসনাত লিখেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল এক লাখ টাকা। দুদকের এসব কাজকারবার এই প্রথম না। শেখ হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে।
অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য এক লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে।
মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুস দেন নাই, কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’
ওইদিনই হাসনাত আব্দুল্লাহর ওই পোস্টের প্রতিবাদ জানায় দুদক। দুদকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দুদক মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনেকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। এরপরও আমরা দেখেছি এখনো অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পড়ছেন। আমাদের কাছে ৪টা এমন জিডি রয়েছে। যারা প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন, তারা জিডি করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দলের সংগঠক তার ভেরিফায়েড পেজে যে তথ্য পরিবেশন করেছেন সে বিষয়ে আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যিনি অভিযোগকারী ছিলেন তার নম্বরে যোগাযোগ করেছে যেই প্রতারক- সেই প্রতারকের নম্বর থেকে এই ধরনের আরও ৪টা ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেছেন।’
দুদক মহাপরিচালক বলেন, ‘যেগুলো এখন আমাদের টিমসহ সংশ্লিষ্ট থানা বিষয়গুলো তদন্ত করছে। এটা যে প্রতারকচক্রের কাজ সেটা আপনারা শিগগির জানতে পারবেন। সব তথ্য আমাদের হাতে এসেছে।’
প্রতারণার সঙ্গে দুদকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে, যোগ করেন দুদক মহাপরিচালক।
যারা প্রতারণা করেন তারা অনেক স্মার্ট জানিয়ে আক্তার হোসেন বলেন, ‘দুদকের চেয়ারম্যান পরিচয়ে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ আইডি খোলা হয়েছিল। নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থ নেওয়া হয়েছিল। সেই ভুয়া দুদক চেয়ারম্যানসহ ৪ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা রিমান্ডে আছেন।’
এদিকে, এ ঘটনার অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী। তারা হলেন অ্যাডভোকেট নাদিম মাহমুদ, ইয়াছিন আলফাজ ও মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
চিঠিতে বলা হয়, দুদক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য শুধুমাত্র প্রতিবাদলিপি দিয়েছে, যা আইনগত নয় এবং এই বিষয়টিতে দুদকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছেন কি না আইনত খতিয়ে দেখা এবং গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা জরুরি।
অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান না করে শুধুমাত্র দুদক কর্তৃক প্রতিবাদলিপি প্রদান করা আইনগত কোনো প্রসিডিওর নয়।
এতে আরও বলা হয়, অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দুদক তার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কার্যকরী ও দৃশ্যমান এবং উচ্চপদস্থ কমিটি গঠন করে ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করবে।