সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রোডমার্চ-সমাবেশসহ ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে। এই দফার শেষ কর্মসূচিতে থাকবে কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ। যা হবে আগামী ৩ অক্টোবর।
সোমবার বেলা আড়াইটার পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় কর্মসূচির ঘোষণা করেন নজরুল ইসলাম খান।
গত ১২ জুলাই সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলন শুরুর পর ঢাকায় মহাসমাবেশ, রাজধানীর চার প্রবেশমুখে ‘অবস্থান’ কর্মসূচি এবং একাধিকবার পদযাত্রাসহ গণমিছিল করেছে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল ও জোটগুলো। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রায় দেড় দশক ধরে রাজনীতির বাইরে থাকা দলটি।
এ সময় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলার জিনজিরা, কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ হবে। প্রথম দিনের সমাবেশের পর ২১ সেপ্টেম্বর শুরু হবে রোডমার্চ। ওইদিন ভৈরব থেকে সিলেটের পথে রোডমার্চ করবে দলটি। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ হবে। একই দিনে সারাদেশে বাদ জুমা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা দোয়ার আয়োজন করবে।
২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে রোডমার্চ হবে। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার নয়াবাজার ও আমিনবাজারে সমাবেশ হবে। ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে রোডমার্চ। ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নারী সমাবেশ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।
পহেলা অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে রোডমার্চ হবে। পরদিন ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ হবে। আগামী ৩ অক্টোবর এই দফার শেষ কর্মসূচি হবে। সেদিন কুমিল্লা, ফেনী, মিরেরসরাই হয়ে চট্টগ্রামে রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নেতৃত্ব দেবেন বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চারদিনের কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ ও পদযাত্রার চার দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সোমবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম তাদের জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হবে। সেসব সেমিনার ও আলোচনা সভার তারিখ স্থানসহ বিস্তারিত পরবর্তী সময় জানানো হবে।
লিখিত বক্তব্যে শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক দফা ঘোষিত হওয়ার পর যুগপৎ আন্দোলনের বার্তাটি খুব পরিষ্কার যে অনতিবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার রাস্তা খুলে দিতে হবে। আমরা মনে করি, চরম কর্তৃত্ববাদী বর্তমান সরকারের বিদায় নিশ্চিত করতে হবে, যাতে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
যাযাদি/ এস