মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ সম্মেলনে ত্যাগি নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে কমিটি ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সোমবার (১৭ জুন) রাতে উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সাধুরব্রিজ এলাকায় ইউনিয়ন বিএনপির অফিসে জরুরী সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌকিদারসহ বঞ্চিতরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা শাহাবুল শিকদার বলেন, আমি বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে আমাকে এ পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অথচ যিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এবং হওয়ার যোগ্য তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে রেখেছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপির কোন মিছিল মিটিং বাদ দেই নাই। রাজপথে থেকেছি, মামলায় পড়েছি, জেল খেটেছি। আওয়ামীলীগের কোন নেতার সাথে আমার কোন ছবিও নাই। তারপরও আমাদের মতো ত্যাগি নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে আওয়ামীলীগ ঘেষা, আওয়ামীলীগেরটা খেয়ে পড়ে বেচে থাকাদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের বিষয় সব কিছু জেনেও আমাদের বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এসময় আওয়ামীপন্থী লোকজন হট্টগোল করে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাংচুর করেছে। এতে আমরা কয়েকজন কিছুটা আহত হয়েছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই এবং এ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের অনুরোধ করছি। নাহলে আমাদের মতো ত্যাগি নেতারা রাজনীতি ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।
শাকিল কবিরাজ বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লীগের নির্যাতন, হমলা, মামলা সহ্য করে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু এতো ত্যাগ স্বীকার করেও এখন দেখছি আমাদের কোন মূল্যায়নই নাই। যারা আওয়ামী লীগের সাথে মিলে ছিল তারাই সামনের কাতারে থাকে এবং কমিটিতে পদ পায়।
আমি বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু প্রথমে আমার নাম লিখলেও পরে আবার বাদ দেওয়া হয়। সেখানে টাকার বিনিময়ে কিবরিয়া হাওলাদারের নাম লিখে দেয় জেলা বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। আমার বিষয়ে তারা সরজমিনে তদন্ত করুক। যদি আওয়ামী লীগের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা পায় তাহলে আমি এই পদ চাই না।
কিন্তু কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই যদি আমাদের মতো ত্যাগি নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয় তাহলে আমরা জাবো কোথায়? এতো কষ্ট সহ্য করে বিএনপির রাজনীতি করে কি পেলাম? জনাব তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আমরা এই কমিটি বাতিল চাই।
বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌকিদার বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছর আওয়ামী লীগের নির্যাতন সহ্য করে, আমার ব্যবসা বানিজ্য নষ্ট করে বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আওয়ামী লীগের নৌকা পোড়ানো মামলা খেয়েছি।
বিভিন্ন আতঙ্কে ভয়ে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বাসা ভাড়া থেকেছি। এই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে আমাকে সভাপতি পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি সভাপতি প্রার্থীর ফরম কিনে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ফজলু হাওলাদারকে সভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের এই আচরণে খুবই কষ্ট পেয়েছি। বিপদের সময়ে রাজপথে থাকা নেতাকর্মীরা যদি যোগ্য পদ না পায় তাহলে কষ্টের সীমা থাকে না।
সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ৭ জন ফরম জমা দিয়েছিল। এর মধ্যে আমি ছাড়া কারোই কোন আন্দোলন সংগ্রামের ডকুমেন্টস নাই। তারা সকলের আমলনামা যাচাই-বাছাই করে দেখুক। যদি আমি সভাপতি পাওয়ার যোগ্যতা রাখি তাহলে আমি সভাপতি চাই। কিন্ত আমাকে সাধারণ সম্পাদক পদ দিল কেন! আমিতো সাধারণ সম্পাদকের ফরম কিনিই নাই। দলের কাছে পুনরায় বিবেচনার দাবি করছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুল্লাহ বেপারী, যুবদল নেতা মিন্টু ফকির, শ্রমিক দলের সভাপতি কাঁলাচান সরদার প্রমুখ।
জানা গেছে, সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। এর মধ্যে ২ জন কামাল চৌকিদারকে সমর্থন দিয়ে পদ থেকে সরে দাড়ান। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। এর মধ্যে ৩ জন হাল ছেড়ে দিয়ে সরে দাড়ান। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৬ জুন) বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন নয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্টন বৈদ্য সমর্থিত কামাল চৌকিদার ও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা গ্রুপের সঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান সমর্থিত ফজলু শেখ ও লুৎফর হাওলাদার গ্রুপের বাকবিতন্ডা হয়।
পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সভাস্থলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তিনটি আতশবাজি বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় থানা পুলিশ এগিয়ে গেলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে আওয়ামীলীগ সরকারের সময় বিভিন্ন সভা সমাবেশ মিছিল মিটিং ও নেতাকর্মীদের সাথে ছবি থাকার প্রসঙ্গ উঠালে আবারও দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ৩ টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ৫০০ টাকা মূল্যে দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন এবং পূরণ করে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দেন।
এসময় যাচাই-বাছাই এবং আলোচনা শেষে ফজলুল হক হাওলাদারকে সভাপতি, কামাল চৌকিদারকে সাধারণ সম্পাদক ও কিবরিয়া হাওলাদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দরা। এবং পরবর্তীতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নিয়ে আবারও তৃতীয় দফায় সংঘর্ষ হয়। আহ্বায়ক কমিটির উপর চড়াও হন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। পুলিশের সহযোগিতায় গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. জাফর আলী মিয়া।
তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বজলু হাওলাদার অ্যাড. এএইচএম মিজানুর রহমান ও গাউস-উর-রহমান।