শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির পুরনো টুইটে বিজেপির নতুন সমস্যা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

বিবিসির তথ্যচিত্রে বিব্রত বিজেপি পাল্টা প্রচারে নামলেও তাদের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে পুরনো এক টুইট। ওই টুইটে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই ব্রিটিশ গণমাধ্যমের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, দেশের সরকারি প্রচার মাধ্যমের বিশ্বাস যোগ্যতাকেও তিনি দাঁড় করিয়েছিলেন কাঠগড়ায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সদ্য সম্প্রচারিত বিবিসির 'ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন' তথ্যচিত্রকে 'পক্ষপাতদুষ্ট, অপপ্রচারমূলক, বস্তুনিষ্ঠ নয়' অভিহিত করে ও তাতে 'ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন' দেখে বিবিসির বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতি মারাত্মক প্রশ্ন তুলেছে। তথ্যচিত্রটি কতখানি 'ষড়যন্ত্রমূলক ও দূরভিসন্ধিতে' ভরা তা নিয়ে শাসক দল ও সরকার প্রচারে নেমেছে। এ সময়ই 'ভাইরাল' হয়েছে প্রায় এক দশক পুরনো নরেন্দ্র মোদির সেই টুইট।

২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল করা সেই টুইটে মোদি লিখেছিলেন, 'তখনো দূরদর্শন (টেলিভিশন) ছিল। আকাশবাণী (রেডিও) ছিল। (অথচ) সাধারণ মানুষ কী নিয়ে আলোচনা করতেন? আমরা বিবিসিতে শুনেছি। দূরদর্শন, আকাশবাণীর ওপর মানুষের কোনো বিশ্বাস ছিল না।' ওই টুইট দেশের আইনমন্ত্রীর মন্তব্যকেও অন্য আলোয় তুলে ধরেছে। আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু গত রোববার বলেন, 'দেশের অনেকে এখনো ঔপনিবেশিক ঝিমুনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তারা বিবিসিকে সুপ্রিম কোর্টেরও ওপর স্থান দেন।'

যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও সরকার নিশ্চিত হতে পারছে না। বিভিন্ন বিরোধী নেতা 'সেনসরশিপের' বিরোধিতা করে তথ্যচিত্রটি প্রচার করছেন। যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ওব্রায়ান ও মহুয়া মৈত্র। দুজনেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই তথ্যচিত্রটি আবার টুইটের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। মহুয়া লেখেন, 'পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের সম্রাট ও তার পরিষদবর্গ কী প্রবল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন! দুঃখিত, বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেনসরশিপ মানব বলে নির্বাচিত হইনি।' টুইটের সঙ্গে তথ্যচিত্রের লিংক জুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'পারলে দেখুন'। ডেরেকও জানিয়েছেন, 'আগের টুইট মুছে দেওয়া হলেও নতুনটি তিন দিন ধরে বহাল। পারলে দেখুন।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজেপির এক নেতা গত সোমবার বলেন, 'তথ্যচিত্রের মূল বক্তব্য খন্ডন করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত ষড়যন্ত্র ও নরেন্দ্র মোদির সম্পৃক্ততার অভিযোগ অসাড় বলে রায় দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই তথ্যচিত্র প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকর।'

কেন ক্ষতিকর সেই ব্যাখ্যায় ওই নেতা গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসির বিশ্বাসযোগ্যতাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, 'অন্য কোনো গণমাধ্যম হলে অন্য কথা হতো। বিবিসির সঙ্গে ভারতীয় জনগণের পরিচিতি বহু প্রাচীন। তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি। তা ছাড়া ওই তথ্যচিত্রের আধার হলো ব্রিটিশ সরকারের এক রিপোর্ট। সেটা অগ্রাহ্য করা কঠিন।'

লক্ষ্যণীয়, তথ্যচিত্র নিয়ে ভারত সরকার ব্রিটিশ সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করেনি। তাদের ভারত বিরোধিতার অংশীদার করেনি। বরং বলছে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানিয়েছেন তিনি সহমত নন। সরকারের যাবতীয় আক্রমণের লক্ষ্য বিবিসি।

বিজেপি ও সরকারের তরফ থেকে পাল্টা প্রচারে নামা হয়েছে। বিভিন্ন মহলকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন শতাধিক সাবেক আমলা, বিচারপতি, সেনা কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত বিবিসির প্রতি তোপ দেগেছেন। তাদের অভিযোগ, ভারতের প্রতি 'একপেশে নীচু ধারণা' থেকেই এই তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতের উত্তরোত্তর উন্নতি ও শক্তিবৃদ্ধি তাদের হতাশ করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে