মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯
walton

ইরাক যুদ্ধের পরিণতি ২০ বছর পর ভোগ করছে আমেরিকা

প্রেসিডেন্ট সাদ্দামকে উৎখাত
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
ইরাকে আমেরিকান সেনা -ফাইল ছবি

ইরাক যুদ্ধের ২০ বছর পর এর পরিণতি ভোগ করতে শুরু করেছে আমেরিকা। বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্ষমতা বেড়েছে, ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের রাখা থেকে শুরু করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধাদের মোকাবিলা করার জন্য বিপুল অর্থ ও লোকক্ষয় হয়েছে। এর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি এখন জটিল হয়ে পড়েছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবিস্নউ বুশ ২০০৩ সালে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতাচু্যত করেন। সাদ্দামের সুন্নি-প্রধান সরকারের পতনের পর দেশটিতে শিয়ারা সরকার গঠন করে। এর ফলে ইরাকের সঙ্গে সখ্য বাড়ে আরেক মার্কিন শত্রম্ন ইরানের। ২০১১ সালে ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করে আমেরিকা। দেশটির বিরুদ্ধে আক্রোশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে মাথাচাড়া দেয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এই গোষ্ঠীটি এক বছরের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়। এই বিষয়টি আমেরিকার ওপর আস্থা কমিয়ে দেয় আরব রাষ্ট্রগুলোর। তার সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে, গত সপ্তাহে সাত বছরের বিরোধের অবসান ঘটিয়ে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে ইরান ও সৌদি আরব।

গত সপ্তাহে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় 'যুদ্ধের খরচ' প্রকল্পের আওতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার খরচ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার কোটি ডলার। এর সঙ্গে পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দপ্তরের খরচ, যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা ব্যয় এবং যুদ্ধের জন্য নেওয়ার ঋণের সুদ এবং যুদ্ধফেরত ব্যক্তিদের সেবা যুক্ত করলে ২০৫০ সালে এই খরচ বেড়ে দাঁড়াবে দুই লাখ ৮৯ হাজার কোটি ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে ইরাক ও সিরিয়ায় চার হাজার ৫৯৯ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। এর সঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ার নিহত বেসামরিক নাগরিক, সেনা, পুলিশ, বিরোধীদের যোদ্ধা ও সংবাদকর্মীদের সংখ্যা যুক্ত করলে যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা হবে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার। অবশ্য এটি শুধু যুদ্ধে সরাসরি নিহতের সংখ্যা। যুদ্ধের কারণে ছড়িয়ে পড়া রোগ, বাস্তুচু্যতি বা অনাহারে মৃতের সংখ্যা হিসাব করলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করেছিল তখন প্রেসিডেন্ট বুশের অধীনে পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি রিচার্ড আর্মিটেজ বলেছিলেন, এই হামলা 'একটি বড় কৌশলগত ত্রম্নটি হতে পারে'। সেই আর্মিটেজ ২০ বছর পর বলেছেন, 'দেশের নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দ্রম্নত সিদ্ধান্তের অক্ষমতা, অনিচ্ছা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দিয়েছে, যার থেকে আইএসের জন্ম।'

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি জিম স্টেইনবার্গ বলেছেন, ইরাক যুদ্ধ একতরফাভাবে কাজ করতে ওয়াশিংটনের ইচ্ছা এবং অংশীদার হিসেবে তার দৃঢ় থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেন, 'নিট ফলাফল... আমেরিকার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য খারাপ, মার্কিন প্রভাবের জন্য খারাপ, এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বের ক্ষমতার জন্য খারাপ।' স্টেইনবার্গের মতে, ইরাক যুদ্ধ ছিল আমেরিকার জন্য একেবারেই 'অপ্রয়োজনীয়'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে