শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ

গাজায় এখন কেয়ামত পরিস্থিতি

গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
গাজায় এখন কেয়ামত পরিস্থিতি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নাসের হাসপাতালে তখন তুমুল হট্টগোল, আর্তচিৎকার ও আহাজারি। বাইরে মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ নিয়ে একের পর এক ছুটে আসছে অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক, এমনকি গাধায় টানা গাড়ি। মানুষগুলোর কারও শরীরে প্রাণের স্পন্দন আছে, কেউ একেবারে নিথর। এরই মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে এক শিশুর আবদার, 'আমার মাকে এনে দাও।'

শিশুটির মা আর কখনো ফিরে আসবেন না। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি স্কুলে গত সোমবার রাতে ইসরাইলের নারকীয় বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন তিনি। স্কুলটিতে আশ্রয় নেওয়া হতাহত ব্যক্তিদেরই নিয়ে আসা হয় ওই হাসপাতালে। এমন হামলা ও রক্তক্ষয়ের চিত্র এখন পুরো গাজাজুড়ে। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণসহায়তা বিষয়ক সমন্বয়ক লিন হেস্টিংস মঙ্গলবার বলেছেন, 'গাজার কোথাও নিরাপদ নয়, সেখানে এখন কেয়ামত পরিস্থিতি। গাজাবাসীর আশ্রয় নেওয়ার কোনো জায়গা আর বাকি নেই।'

আসলেই গাজাবাসীর যাওয়ার জায়গা নেই। ইসরাইলের হুমকির মুখে প্রথমে উপত্যকাটির উত্তর থেকে দক্ষিণে পালাতে হয়েছিল তাদের। এবার দক্ষিণ থেকে আরও দক্ষিণে সরতে বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে সোমবার থেকে উত্তরের পাশাপাশি দক্ষিণ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। পাশাপাশি সংঘাত শুরুর পর থেকে আকাশপথে নির্বিচার বোমাবর্ষণ তো চলছেই।

গত বৃহস্পতিবার গাজায় সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। এর কয়েক দিন বাদেই দক্ষিণ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করল ইসরাইলি বাহিনী। খান ইউনিসের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ এলাকার পূর্বাংশে প্রথমবারের মতো ইসরাইলের ট্যাংক প্রবেশ করেছে। সেগুলো বনি সুহাইলা ও হামাদ সিটি এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা এখন দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধে এগিয়ে চলেছি। এই ধাপ কঠিন হতে চলেছে।'

ইসরাইলি বাহিনী গাজায় তাদের অভিযানকে বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত করলেও নৃশংসতা কখনোই কমায়নি। গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। একই সময় পশ্চিম তীরে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা আড়াই'শর বেশি। এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতের শুরুতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলায় দেশটিতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার বাসিন্দাদের শোচনীয় অবস্থার কথা তুলে ধরেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা। জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথসের ভাষ্যমতে, গাজায় 'কেয়ামতের' মতো পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আর জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডবিস্নউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, গাজার মানুষকে যেখানে চলে যেতে বলা হয়েছে, তার আয়তন পুরো উপত্যকাটির এক-তৃতীয়াংশের কম।

এদিকে মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সম্মেলনে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে নিশ্চুপ থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দুষেছেন তিনি। শেখ তামিম বলেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে তার দেশ।

গাজার বাসিন্দাদের সুরক্ষা দিতে ইসরাইলের প্রতি মঙ্গলবারও আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, গাজার কোনো এলাকা নিরাপদ ঘোষণার পর সেখানে হামলা না চালানোর বিষয়টি ইসরাইলকে মাথায় রাখতে হবে।

তবে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে যাই বলুক না কেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ গাজায় আরও জোর সামরিক শক্তি খাটাবেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে