সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ফিলিস্তিন ইসু্য

আমেরিকায় মুসলমান ও ইহুদি বিদ্বেষ দুটোই বেড়েছে

মুসলমানের ওপর বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা ও অপরাধ বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ আর ইহুদি বিদ্বেষ বেড়েছে ৩৬০ শতাংশের বেশি
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আমেরিকায় মুসলমান ও ইহুদি বিদ্বেষ দুটোই বেড়েছে

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধের জেরে গত চার মাসে আমেরিকায় মুসলমান ও ইহুদি বিদ্বেষ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা-অপরাধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স

মার্কিন মুসলমানদের বৃহত্তম সংস্থা 'দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স' (কেয়ার) সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর- এই তিন মাসে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে মুসলমান ও ইসলামবিদ্বেষী ঘটনা ও অপরাধ সংক্রান্ত তিন হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ এসেছে সংস্থাটির কাছে। চাকরিক্ষেত্রে বঞ্চনা-বৈষম্য ও চাকরিচু্যতি, ঘৃণামূলক অপরাধ-ঘটনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্যমূলক নীতি ও ঘটনাসহ আরও বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের বিবরণ রয়েছে এসব অভিযোগের মধ্যে।

বিবৃতিতে কেয়ার বলেছে, 'অভিযোগের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পেয়েছি, ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের এই সময়সীমায় শতকরা হিসেবে আমেরিকায় মুসলমান বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা ও অপরাধ বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। এই সময়সীমার মধ্যে চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে ৬৬২টি, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণামূলক আচরণ ও অপরাধ ঘটেছে অন্তত ৪৭২ বার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বঞ্চনা-বৈষম্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে ৪৪৮ বার। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, বর্তমানে আমেরিকা জুড়ে মুসলমান বিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিন বিদ্বেষের ঢেউ চলছে।'

এদিকে, গাজা যুদ্ধের গত প্রায় চার মাসে আমেরিকায় মুসলমান বিদ্বেষের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাবও। দেশটিতে বসবাসকারী ইহুদিদের বৃহত্তম সংস্থা 'অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগের' তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যত ইহুদি বিদ্বেষী তৎপরতা ও ঘটনা ঘটেছে, শতকরা হিসাবে তা গত ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়সীমার তুলনায় ৩৬০ শতাংশ বেশি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরাইলি ও বিদেশি নাগরিকসহ এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরাইলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের মৃতু্য দেখেছে ইসরাইল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে চার মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।

গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনো তাদের হাতে আটক রয়েছেন।

এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরাইলকে রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে আমেরিকা। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শেষে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল নামে স্বাধীন দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে ওয়াশিংটন।

তবে ওয়াশিংটনের এই অবস্থানকে সমর্থন করছে না ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে