বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নিহত ৪৮

ইসরায়েলি ট্যাংক ঢুকে পড়েছে গাজার উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের গভীরে

গাজার মধ্যাঞ্চলে পরিবারগুলো শুধু পানি পান করে এবং খেজুর খেয়ে দিন কাটাচ্ছে
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইসরায়েল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর তান্ডবে লেবাননে বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আর নিহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। ছবিটি বুধবার দক্ষিণ বৈরুতের শহরতলি থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। ওই অঞ্চলে চিকিৎসা কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছেন। মধ্যাঞ্চলীয় এলাকাগুলোয় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বোমা হামলা জোরদার করার পর এমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলের ট্যাংকগুলোও গাজা উপত্যকার উত্তর ও দরিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর আরও গভীরে ঢুকে পড়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ হতাহতের ঘটনার পর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৩৩০ জনে। এছাড়াও মোট আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে এক লাখ চার হাজার ৯৩৩ জনে। তবে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে চাপা পড়েছেন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবলের অভাবে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় বেইত লাহিয়া শহরে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে একটি বাড়িতে দুটি বিমান হামলায় ছয় ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে ইসরায়েলি হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন। পরে পূর্বাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় একটি আশ্রয় শিবিরের কাছে ইসরায়েলের বিমান হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। বাস্তুচু্যত পরিবারগুলো ওই শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে কয়েকটি হামলা চালানো হয়েছে। শিবিরের আল-আওদা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এতে একটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন মসজিদের বাইরের সড়কগুলোয় হামলা হয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আশ্রয় শিবিরের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো অগ্রসর হওয়ায় বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের বাড়িতে আটকা পড়েছে। ট্যাংক থেকে অনবরত গোলা ছোড়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্স সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।

এদিকে, অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার মধ্যে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকায় আটকে পড়া মানুষেরা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আছেন। জাতিসংঘ বলেছে, 'খাবার-দাবার দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এবং দুর্ভিক্ষ আসন্ন। গাজার পানি সরবরাহের বেশির ভাগই পানের জন্য অনিরাপদ। কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় পরিবারগুলো পরিত্যক্ত বাড়িতে বা খোলা জায়গায় বসবাস করছে।'

গাজার মধ্যাঞ্চলে পরিবারগুলো শুধু পানি পান করে এবং খেজুর খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, 'বেসামরিক নাগরিকেরাও বলেছেন, ইসরায়েলি বিমান ও গোলা হামলায় বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষের নিচে তাদের পরিবারের সদস্যরা চাপা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা যাচ্ছে না।'

গত মঙ্গলবার লেবাননে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি এখন গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে তৎপর হবেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম 'চ্যানেল ফোরটিন'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সম্ভাব্য চুক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি মনে করি, অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।'

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে