সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

নিরাপদ মাংস ও ডিম উৎপাদনে ৩০ খামারিকে বাকৃবির প্রশিক্ষণ

তানিউল করিম জীম
  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নিরাপদ মাংস ও ডিম উৎপাদনে ৩০ খামারিকে বাকৃবির প্রশিক্ষণ
নিরাপদ মাংস ও ডিম উৎপাদনে ৩০ খামারিকে বাকৃবির প্রশিক্ষণ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে উন্নতি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ অক্টোবর 'নিরাপদ মাংস ও ডিম উৎপাদন' শীর্ষক একটি দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন ব্রয়লার ও লেয়ার খামারি, যারা আধুনিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে মাংস ও ডিম উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো শিখেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের আওতায় এটি আয়োজন করা হয়।

কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে, সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান ও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন। 

বিশ্বজুড়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ এখন অগ্রাধিকার। বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পোল্ট্রি শিল্পের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে খামারিরা নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। ভেজাল খাদ্য, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম। এর ফলে উৎপাদিত মাংস ও ডিমের গুণগতমান হ্রাস পায় এবং তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ৩০ জন খামারি আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ, পানি ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য নিষ্কাশন এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করেছেন। প্রশিক্ষণে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় কীভাবে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করা যায় এবং অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির উপরও আলোকপাত করা হয়, যার মাধ্যমে খামারিরা তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং একইসঙ্গে নিরাপদ মাংস ও ডিম সরবরাহ করতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, 'বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি খাতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমাদের অবদান অনস্বীকার্য। আজকের এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারিরা নিরাপদ এবং পুষ্টিকর মাংস ও ডিম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন কেবল ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাই নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।'

প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, এই কর্মশালার মাধ্যমে ব্রয়লার ও লেয়ার খামারিরা আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তারা এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিরাপদ মাংস ও ডিম উৎপাদনে অবদান রাখতে পারবেন।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী খামারিরা জানান, তারা আধুনিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে মাংস ও ডিম উৎপাদনের কৌশল সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছেন, যা তাদের খামারের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং ভোক্তাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ করতে সাহায্য করবে। 

সাজেদুল ইসলাম নামের এক খামারি বলেন, 'এই প্রশিক্ষণে আমরা আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধের কৌশল শিখেছি। আমরা এখন আরও উন্নত ও নিরাপদ পদ্ধতিতে মাংস ও ডিম উৎপাদনে সক্ষম হব।'

নিরাপদ মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের কর্মশালা শুধু খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে না, বরং দেশের জনগণের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে হলে খামারিদের আরও প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় নিরাপদ মাংস ও ডিম উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাকৃবির এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা খামারিদের সঠিক পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদনের জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করেছে, যা তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখার সুযোগ করে দেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে