বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

প্রতিভা ও মনন বিকাশে পাঠচক্র

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে পাঠচক্রের বিকল্প নেই। পাঠচক্র এমন এক আড্ডা, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা একসঙ্গে বসে নানাবিধ বিষয়ের জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের আবিষ্কার করেন। এতে উঠে আসে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়। আবার এসব বিষয় নিয়ে হয় যুক্তিতর্ক, জ্ঞানের আদান-প্রদান। আর এর মধ্য দিয়েই পাঠচক্র মানুষকে সশিক্ষিত করে তুলে। বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটায়। ভাবতে শেখায় ভিন্নভাবে। নিজেকে উপস্থাপন, অন্যকে ধারণ করা থেকে শুরু করে সৃজনশীলতা, সহনশীলতা, রুচিশীলতা বাড়ায় বহুগুণ। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে পাঠচক্রের আয়োজন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. মেহেরাব হোসেন রত্ন
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রতিভা ও মনন বিকাশে পাঠচক্র
প্রতিভা ও মনন বিকাশে পাঠচক্র

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে পাঠচক্র

মারুফ হোসেন

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

বই জ্ঞানের খোরাক। বই মানুষকে হাসায়, কাঁদায়, ভাবায়। ডুবুরি যেমন গভীর সমুদ্রে মণিমুক্তা আহরণ করে, তেমনি বই পাঠককে জ্ঞানের গভীর সমুদ্রে ডুব দিতে সাহায্য করে। আর বই পাঠের পর যদি পাঠচক্রের আয়োজন হয়, সেই বই আলোচনা তখন জ্ঞানের বিকাশকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করে। সুশৃঙ্খল, বিনয়ী, সহনশীল, আলোকিত সমাজ গঠনে পাঠচক্রের প্রসার জরুরি। পাঠচক্রের মাধ্যমে একদিকে যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল মানুষ তৈরি হয়, অন্যদিকে আলস্য কাটে, মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা দূর হয়। একটি পাঠচক্রে একে অন্যের মধ্যে যে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়, তা অন্য উপায়ে সম্ভব নয়। তাই সুন্দর, সৃজনশীল, রুচিশীল ও মানবিকবোধসম্পন্ন সমাজ বিনির্মাণে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে নিয়মিত বই পাঠ ও পাঠচক্র আয়োজনের বিকল্প নেই।

পাঠচক্র মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়

মোছা. রিয়া আক্তার

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

পাঠচক্র এমন একটি বিষয়, যেটির মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় সম্ভব হয়, যা বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। এছাড়া পাঠচক্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দলগত কাজের দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং সমালোচনামূলক ভাবনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিশেষ করে কোনো পাঠক যখন একটি বই বা লেখা পড়ে, সিনেমা দেখে, ভ্রমণ করে বা যেকোনো বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করে এবং অন্যের মতামত শোনে, তখন তার বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে। বুদ্ধির নতুন নতুন আঙ্গিক তৈরি হয়। তেমনি ক্যাম্পাসগুলোতে পাঠচক্রের আয়োজন শিক্ষার্থীদের প্রাসঙ্গিক জ্ঞানকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, যা তাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পাঠচক্র অন্যের মতামত শোনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সানজিদা ইয়াসমিন লিজা

শিক্ষার্থী, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্যাম্পাসে নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিস্তৃতি ও চিন্তাভাবনা প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যেমন জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি কোনো বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা ও ব্যতিক্রম চিন্তাও জাগ্রত হয়। পাঠচক্রে অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে যে যার মতো করে সুশৃঙ্খলভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করে। এতে একদিকে যেমন কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে অন্যের কথা শোনার এবং অন্যকে বলতে দেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। ফলে পাঠচক্রের মাধ্যমে মানুষের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে, আবার দলগত কাজ করার প্রবণতাও বাড়ে। আমাদের উন্নত মন-মানসিকতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে ক্যাম্পাসগুলোতে নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন একটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

পাঠচক্র পাঠাভ্যাস তৈরি করে

তৈয়বা খানম

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। সেই ব্যস্ততার জায়গা বইকে ঘিরে হলে মন্দ হয় কি! বইকে ঘিরে গড়ে তোলা জ্ঞানের প্রাচীরের অসংখ্য মানুষের সান্নিধ্যে মেলে পাঠচক্রে। পরিচিত আলোচনার মাঝেও যেন আমরা নতুনত্ব খুঁজে পাই। একটি বই পড়ে কয়েকজন মিলে আলোচনা করলে আমাদের চিন্তা-চেতনাগুলো জানা যায়। সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা পড়ুয়াদের মধ্যে সেতুবন্ধ রচিত হয়। নানা মুনির নানা মত থেকে আমরা আমাদের চিন্তার প্রসারতা তৈরি করতে পারি। মেলে ধরতে পারি সম্ভাবনার ডালপালা। পাঠচক্রের মাধ্যমে আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ তৈরি করা সম্ভব, যারা সৃজনশীলতা, রুচিশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

পাঠচক্রে ভিন্নমতের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়

ভূঁইয়া শফি

শিক্ষার্থী, মির্জা আজম কলেজ, জামালপুর।

বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। জ্ঞানীরা মানুষকে বই পাঠে উৎসাহিত করেছেন। তারা সুযোগ পেলেই বই বা বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ জুড়ে দিতেন, আসর বসাতেন। এই জ্ঞানের বিনিময় বা মতামত আসরকেই বলা হয় পাঠচক্র। পাঠচক্রে একটি বই সম্পর্কে উপস্থিত সবার মতামত বা অভিজ্ঞতা জানা যায়। এতে একই বই সম্পর্কে একেকজনের কাছ থেকে একেক মতামত, একেক উপলব্ধি বা দৃষ্টি উঠে আসে, যা নতুন জ্ঞান সৃজনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ বইটি পড়ে বা সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান আহরণ করতে না-ও পারে, পাঠচক্রের মাধ্যমে তা পূর্ণ হয়ে যায়। পাঠচক্রের মাধ্যমে যেমন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে, তেমনি একে অন্যের প্রতি আন্তরিকতা বাড়ে, সহনশীলতা তৈরি হয়।

প্রতিটি ক্যাম্পাস পাঠচক্রের মাধ্যমে জ্ঞান বিকিরণের চর্চা হোক

আবু ছাকিব মো. নাজমুল হক

শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী।

বর্তমান বাংলাদেশে বিশ্লেষণধর্মী জ্ঞানচর্চার বিকল্প নেই। দেশের বিভিন্ন সংকট নিরাসনে কিংবা সম্ভাবনা তুলে ধরতে প্রয়োজন বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা এবং গবেষণা। শুধু বর্তমানে নয়, এজন্য যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ প্রয়োজন। পাঠচক্র আমাদের জন্য তেমনই একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। পাঠচক্রে সাধারণত একটা বিষয়ের উপর কিংবা যে কোনো বিষয়ের উপর বিভিন্ন ধরনের চিন্তা, যুক্তি বা দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠে। তখন সেই পাঠচক্রে থাকা মানুষটি বা শিক্ষার্থীটি যেমন নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তুলতে পারে, তেমনি অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-চেতনার সঙ্গে নিজের চেতনাকে তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেকে শাণিত করতে পারে। পাঠচক্রে একজন মানুষ যখন বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তার সম্মুখীন হয়, তখন নিজেও যেকোনো বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী গভীর চিন্তা করতে শুরু করে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গবেষণাবিমুখ, তারা তাদের মেধাকে বিকশিত করা নয়, বরং চাকরিকে প্রাধান্য দেয়। তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে প্রয়োজন পাঠচক্রের আয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে