যোগাযোগ আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। যোগাযোগকে আমরা কখনোই এড়িয়ে যেতে পারি না, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা যোগাযোগে নিযুক্ত হই অর্থাৎ যোগাযোগ সর্বত্র বিরাজমান। একটি কার্যকর যোগাযোগ পেশাগত সমস্যা সমাধান এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা কি : গণযোগাযোগ হলো এমন এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেখানে বড় আকারের শ্রোতা বা পাঠকের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। বিখ্যাত ব্রিটিশ গণযোগাযোগ তত্ত্ববিদ ডেনিস ম্যাককোয়েল বলেন, গণযোগাযোগ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে, একজন ব্যক্তি, দল বা সংস্থা একটি বার্তা তৈরি করে এবং তা একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে বড়, অজানা এবং বৈচিত্র্যময় শ্রোতাদের কাছে পাঠায়। আর সাংবাদিকতা হলো তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং প্রচারের একটি পেশাগত প্রক্রিয়া। ব্রিটিশ সাংবাদিক জর্জ অরওয়েল বলেন, সাংবাদিকতা হলো এমন কিছু প্রকাশ করা যা অন্য কেউ প্রকাশ করতে চায় না। বাকি সবই জনসংযোগ।
কেন পড়বেন : গণমাধ্যম সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। এটি জনগণের কন্ঠস্বর তুলে ধরে। সমাজের দুর্নীতি, বৈষম্য এবং অসঙ্গতি তুলে ধরার মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন করা যায়। মানুষের সাথে বড় পরিসরে যোগাযোগ গড়ে তোলা, সত্য প্রকাশের সুযোগ, সৃজনশীল কাজের সুযোগ, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সুযোগ এবং মানুষের চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা উন্নয়নে সাহায্য করে।
কী পড়ানো হয় : গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যম, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদান করা হয় যেমন সংবাদ সংগ্রহ ও প্রতিবেদন লিখা, সম্পাদনা, প্রম্নরুফ রিডিং। তাছাড়াও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, আইন, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজিসহ যোগাযোগ ও গণমাধ্যম বিষয় সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় পড়ানো হয়।
ক্যারিয়ার কোথায় : গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে যেমন : সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন, রেডিও ও টেলিভিশন, ডিজিটাল মিডিয়া। তাছাড়া এ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
সাংবাদিক কি হতেই হবে : এ বিভাগে পড়াশোনা করে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হওয়া যায়, সাংবাদিকতা করা বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যম, যোগাযোগ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করে যার ফলে ব্র্যান্ড ম্যানেজার, ইভেন্ট ম্যানেজার, বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ, মিডিয়া পরিকল্পক, চিত্রগ্রাহক, ভিডিও এডিটর, প্রোডাকশন ম্যানেজার, স্ক্রিপ্ট রাইটার ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত হয়।
তাছাড়াও জনসংযোগ কর্মকর্তা, মিডিয়া গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, আন্তর্জাতিক সংস্থায় মিডিয়া কনসালটেন্ট এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। অর্থাৎ সাংবাদিকতার বাহিরেও মিডিয়া, যোগাযোগ, বিজ্ঞাপন, গবেষণা ও ডিজিটাল পস্নাটফর্মে কাজের অসংখ্য সুযোগ রয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়া মানে শুধু পেশাগত দক্ষতা অর্জন নয়, এটি এমন একটি ক্ষেত্র যা সমাজের প্রতিটি স্তরের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কেউ যদি একটি অর্থবহ, সৃজনশীল, কৌতুহলী এবং প্রভাবশালী ক্যারিয়ার চায় তাহলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা হবে তার জন্য সর্বোত্তম পছন্দ।