সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

ক্যাম্পাসে শীতের ছোঁয়া

বি এম মিকাইল হোসাইন
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্যাম্পাসে শীতের ছোঁয়া
ক্যাম্পাসে শীতের ছোঁয়া

শীতকাল তার আগমনী বার্তা দিয়েছে হেমন্তের শুরু থেকেই। ষড় ঋতুর এই বাংলাদেশে প্রতি দশ মাস অন্তর অন্তর আসে শীতকাল। পৌষের শুরু থেকে মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত এই দুই মাস নিয়ে শীতকাল। এই সময় প্রকৃতির বুকে নেমে আসে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া। সেইসঙ্গে প্রচন্ড শীতও অনুভূত হয়।বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে যখন হালকা কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয় তখন মনে হয় যেন প্রকৃতি তার দেহে কোমল ফুলের প্রলেপ লাগিয়েছে। সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় যখন সকালের মিষ্টি রোদ এসে ঝাপটে ধরে কুয়াশাচ্ছন্ন ফসলের মাঠে। পৌষের এই শীতের রুপ ও সৌন্দর্য যেন মেলিয়ে ধরছে এই প্রকৃতির রুপে।

তেমনিভাবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ ও সৌন্দর্য নতুনভাবে বাড়িয়ে তুলেছে শীতকালের এই কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া। দেশের উত্তরাঞ্চলের ক্যাম্পাস হওয়ায় শীত একটু আগেই উঁকি দেয় পাবিপ্রবির বুকে। সূর্য মামা ডুবে যাবার সাথে সাথেই কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস। সুন্দর এই মুহুর্তটি উপভোগ করতে পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে এক মুগ্ধতার মেলা।

যা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মুগ্ধ করে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তানজিম মুস্তাকিম বলেন,

শীতের সকালে কুয়াশার মধ্যে বিল্ডিংগুলোর মাঝ থেকে লাল রঙের রক্ত মাখা মুখ নিয়ে সূর্য উঠে তখন গাছগুলো হেসে ওঠে। লেকের পাশের গাছগুলোতে পাখির আনাগোনা আর ওদের কিচির মিচির শব্দ অসাধারণ লাগে। খেলার মাঠের ঘাস আর তার পাশে থাকা গাছের পাতায় বিন্দু বিন্দু শিশির গুলো যেনো এক স্নিগ্ধতার প্রতীক।

একই বিভাগের শিক্ষার্থী সৈকত বিশ্বাস বলেন, ক্যাম্পাসে যেহেতু গাছপালা তেমন নেই এজন্য সকালে মিষ্টি রোদ ভালোই লাগে সাথে সকালে চা আড্ডা, ক্যানটিনে নাস্তা খাওয়া, সকলে একসাথে ক্লাস করার মজাই আলদা। আবার হলে থাকার সুবাদে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ফুলের সুবাস নিতে পারা সব মিলিয়ে শীত যেন পাবিপ্রবির বুকে এক আশীর্বাদ।

বিকেল গড়িয়ে গেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বন্ধুরা মিলে, সিনিয়র জুনিয়র মিলে বসে যায় আড্ডায়। কখনো কানে আসে লাইব্রেরীর নিচে অনিরুদ্ধ নাট্যদলের পরিবেশনা, কেউবা আবার আনন্দ সরোবরে মেতে থাকে গল্পে, কেউবা আবার লেকের ধারে কোকিল কন্ঠে গেয়ে ওঠে তার প্রিয় গানের লাইন, 'কোন কাননের ফুল গো তুমি, কোন আকাশের চাঁদ গো তুমি।' হঠাৎ করেই কেউবা গিটারে তোলে সুরের ঝঙ্কার। কখনো আবার কয়েকজন বন্ধুরা মিলে চিৎকার করে গেয়ে ওঠে বিরহের সব বেদনাবিধুর গান। এত সব অম্স্নান আখ্যানে ভরপুর ক্যাম্পাসে তাইতো দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন কিছুটা সুন্দর সময় কাটাতে।

বিকেল হলেই স্নিগ্ধ এই পরিবেশে কেউ কেউ তার মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে নিজেকে ক্যামেরা বন্দি করেন, যা তার সময়ের সাক্ষী করতে সাহায্য করে। কখনো কখনো মুক্তমঞ্চে চলে বিভিন্ন জেলা সংস্থার নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠান, যেখানে জেলার বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীরা মনোমুগ্ধকর সব পরিবেশনা করেন।

শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ পিঠা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এসে পাবিপ্রবিতে থাকেন তাই তারা তো আর বাসায় গিয়ে পিঠা খেতে পারছে না, এই প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেই ক্যাম্পাস গেটে গড়ে উঠেছে নানারকম পিঠার দোকান। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই মিথিলা মার্কেট, বাকচীপাড়া বাজার ইত্যাদি জায়গায় ও শিক্ষার্থীরা হরেক রকমের পিঠা খেতে যান। সেইসাথে চায়ের দোকান তো আছেই। হালকা ঠান্ডায় চা যেন এক বিমূর্ত অনুভূতির সৃষ্টি করে। দেখা যায় ক্যাম্পাস গেটের সকল টঙের দোকানে বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়রদের উপচে পড়া ভীড়। এক কাপ চা সাথে সকলে মিলে আনন্দ-বিনোদন, সুখ-দুঃখ, হতাশা-সফলতা ইত্যাদির গল্প করতে করতে কখন সে সময় গড়িয়ে রাত হয়ে যায় কারোর যেন খেয়ালই থাকেনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলে রয়েছে কয়েক প্রকারের ফুলের গাছ যা যেন শুভ্রতা ছড়িয়ে দেয় পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। এসব ফুলের বাহার নিয়ে রীতিমত যেন গর্বই করে এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে, শহীদ মিনারে, স্বাধীনতা চত্বরে শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় ক্যাম্পাস সবসময় সরব থাকে। যা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আন্দোলিত করে।

এভাবেই শীতকাল তার রুপ,সুধা ও সৌন্দর্য দিয়ে আগলে রেখেছে প্রিয় পাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে