শিক্ষা সফর মানেই নতুন অভিজ্ঞতা, প্রাণের উচ্ছ্বাস আর স্মৃতির ঝুলি সমৃদ্ধ করা। 'বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম' জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে এবারের শিক্ষা সফর ছিল এমনই এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। আল আমিন ভাইয়ার আন্তরিক আমন্ত্রণে আমরা চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেটে দুপুরবেলা একত্রিত হলাম। সময়মতো সবাই পৌঁছালে আল আমিন ভাই মাইক্রোবাস নিয়ে হাজির হলেন, আর আমাদের উচ্ছ্বাসের যাত্রা শুরু হলো।
গাড়ি চলতে শুরু করল আর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভরে উঠল চারপাশ। কেউ গাইছিলেন, 'তুমি কেন বুঝ না...' আর বাকিরা সেই গানে গলা মিলিয়ে মুহূর্তটাকে আরও সুরেলা করে তুললেন। কেউ গল্পে মেতে উঠলেন, কেউবা হেসে পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তুললেন। মাইক্রোবাসের প্রতিটি সিট যেন একেকটি ছোট গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল।
যাত্রা শেষে আমরা পৌঁছালাম আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্য বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি। প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল সবুজে মোড়ানো প্রশান্তিময় পরিবেশ, নান্দনিক স্থাপনা আর সুচারুভাবে সাজানো ক্যাম্পাস। আমরা গোল হয়ে বসলাম এবং শুরু হলো সাহিত্য আড্ডা। ভাষাশহীদ স্মারকের সামনে সাহিত্য, সংস্কৃতি আর জীবনের নানামুখী দিক নিয়ে আলোচনা চলল। সময় যে কখন পার হয়ে গেল, তা কেউই বুঝতে পারল না। এরপর শুরু হলো মেরিন একাডেমির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার পালা। কর্ণফুলী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আমরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। নীল জলরাশি আর স্টিমারের চলাচল আমাদের মনে স্বর্গীয় প্রশান্তি এনে দিল। কেউ ছবি তুলছিলেন, কেউবা প্রকৃতির নীরব ভাষার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন।
প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়া মনে হলো প্রকৃতি যেন নিজেকে সাজিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। নদীর স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মেখে আমরা যেন হারিয়ে গেলাম প্রকৃতির মায়াবী জগতে। কর্ণফুলীর তীরে দাঁড়িয়ে সবাই প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন।
সন্ধ্যার মাগরিবের আজান আমাদের বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। সবাই নামাজ আদায় করলাম এবং আল আমিন ভাইয়ের সৌজন্যে হালকা নাস্তা করে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আবার প্রস্তুত হলাম ফেরার পথে পা বাড়ানোর জন্য। ফেরার পথটিও ছিল অন্যরকম রোমাঞ্চকর। সাগরের মাঝ দিয়ে কোশা নৌকায় পার হতে হলো আমাদের। রাতের সাগর, ঠান্ডা বাতাস আর নীরব পরিবেশ যেন অন্য এক রহস্যময় জগতে নিয়ে গিয়েছিল। কেউ কেউ ভয় পাচ্ছিলেন, আবার কেউ প্রাণভরে উপভোগ করছিলেন এই অনন্য মুহূর্ত।
অবশেষে আমরা মেইন রোডে পৌঁছালাম। তবে সেখানে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হলো। গার্মেন্টস কর্মীদের ছুটির ভিড়ে গাড়ি পেতে খানিকটা সময় লেগে গেল। তবে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পর গাড়ি পেলাম এবং সবাই যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
এই শিক্ষাসফর শুধু ভ্রমণ ছিল না, এটি ছিল একেকটি মুহূর্তের গল্প। বন্ধুত্বের বাঁধন আরও দৃঢ় করার সুযোগ, প্রকৃতির সৌন্দর্যকে হৃদয়ে ধারণ করার এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রতিটি হাসি, প্রতিটি আড্ডা আর প্রতিটি মুহূর্ত যেন হৃদয়ের গভীরে অমলিন হয়ে থাকবে।
আমরা আশা করি, এমন সুন্দর মুহূর্ত বারবার আমাদের জীবনে ফিরে আসবে। জীবনের ব্যস্ততার মাঝে এমন সফরগুলো যেন আমাদের প্রশান্তির জায়গা হয়ে থাকে।