মনকে সতেজ ও প্রসারিত করে জীবনকে সুন্দর করতে জ্ঞানের প্রয়োজন। বই পড়া নিজেকে জানার অন্যতম উপায়। শিক্ষার্থীদের পড়ার স্বাধীনতা এবং চিন্তার স্বাধীনতার জন্য স্বাধীনভাবে বই পড়া অপরিহার্য- যা পরবর্তী সময়ে দেশ ও জাতি গঠনে বাস্তব ভূমিকা পালন করে। আর স্বাধীনভাবে বই পড়ার জন্য আমাদের মনোরম পরিবেশের একটা লাইব্রেরি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রন্থাগার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ এবং জ্ঞানের বাহক। পাঠাগার যত উন্নত, দেশ তত উন্নত। এটি উপলব্ধি করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ৭০ হাজার বর্গফুট আয়তনের সুবিশাল পরিসরে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে একাডেমিক বইসহ পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান যেমন ইতিহাস, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ইত্যাদি নতুন-পুরনো সব লোভনীয় বই স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে। এই লাইব্রেরিতে বইয়ের সংগ্রহ খুবই ভালো, মোট প্রায় এক লাখ (১০০,০০০) বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। ডিআইইউ কমিউনিটির প্রত্যেকেই এই লাইব্রেরির সদস্য হতে পারেন। বসে বসে বই পড়ার ব্যবস্থাও বেশ সুন্দর, ৬৫০ জন ব্যবহারকারী একবারে এই লাইব্রেরিটি ব্যবহার করতে পারেন, সদস্য হিসেবে বই বাসায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
লাইব্রেরিতে পেশাগত লাইব্রেরি কর্মীরা এবং দক্ষ লাইব্রেরি পরিষেবা প্রদানের জন্য সার্র্কুলেশন, ক্যাটালগিং এবং প্রসেসিং, মেইন স্ট্যাক, রেফারেন্স এবং রিজার্ভ, নিউজপেপার এবং পিরিওডিক্যাল, আর্কাইভস এবং অডিও ভিজু্যয়াল ম্যাটেরিয়ালের মতো বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও, ব্যবহারকারীদের মধ্যে আধুনিক পরিষেবার জন্য লাইব্রেরি ক্যাফে এবং সিনেপেস্নক্স বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কর্ণার
বঙ্গবন্ধু- একটি নাম, একটি যুগান্তকারী ইতিহাস এবং জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা চেয়েছিল জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় অর্জন করে। এই কর্নারটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করে। এই কর্নারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের জন্ম, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন। বর্তমান প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, দর্শন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করাই এই কর্নারের মূল উদ্দেশ্য। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মডেল হিসেবে, এই কর্নারটি তার সম্পদের মাধ্যমে ইতিহাস এবং বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ব্যবধান পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর গৌরবময় অবদান শুধু একটি জাতিকে স্বাধীন করতেই নয়, তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজেও নেতৃত্ব দিয়েছিল। যা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাসের দূরত্ব ঘোচাতে ভূমিকা রাখবে।
ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি পরিষেবাগুলো ছাড়াও, ই-লাইব্রেরি পরিষেবাগুলো বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ই-রিসোর্স ব্রাউজিং সেন্টারও রয়েছে এ লাইব্রেরিতে। এই ই-লাইব্রেরিতে রয়েছে ই-বুক, ই-জার্নাল, ই-ম্যাগাজিন, অ-ত ডেটাবেসসহ টএঈ, টউখ এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সদস্যতা নেওয়া ই-রিসোর্স। এই করোনা পরিস্থিতিতেও লাইব্রেরি পরিসেবাগুলি সমসাময়িক লাইব্রেরি সফ্টওয়্যার ব্যবহার বন্ধ করে না। ওপেনএথেন্স-এর মাধ্যমে, এই লাইব্রেরির ব্যবহারকারীরা বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে ই-রিসোর্স অ্যাক্সেস করতে পারে। ঠঁঋরহফ-এর মাধ্যমে একটি অনুসন্ধান ব্যবস্থা রয়েছে যার কারণে আলাদা ডেটাবেসে অনুসন্ধান করার প্রয়োজন নেই। এছাড়া কঙঐঅ, উঝঢ়ধপব তো আছেই। শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গবেষণা প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করতে আইএসও সার্টিফাইড ঞঁৎহরঃরহ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন শিক্ষাভিত্তিক গবেষণাপত্র বের করা যায়।
লাইব্রেরির বিভিন্ন অংশে যেমন প্রাইভেট বই পড়ার সুযোগ রয়েছে, তেমনি আরেকটি কোণায় একটি 'ক্যাফে লাইব্রেরি' রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা কফির মগে চুমুক দিয়ে বা হালকা কিছু খেতে খেতে বই পড়তে পারে। লাইব্রেরি জুড়ে পাঠকদের জন্য বিনামূল্যে ওয়ইফাই ব্রাউজিং ব্যবস্থা আছে। যা ড্যাফোডিল কমিউনিটির বইপ্রেমীদের কাছে স্বপ্নের জগতে পরিণত হয়েছে।
তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজকে মাদকসহ নানা অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে বই পড়া ও খেলাধুলার বিকল্প নেই। তাই পাঠকদের কাছে লাইব্রেরিটি সহজলভ্য করতে, পাঠকদের পড়ার অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, উপলব্ধি এবং মতামত বিনিময়ের জন্য বিভিন্ন দল নিয়মিত 'পাঠ-আড্ডা'র আয়োজন করে। মানুষের মানসিক উৎকর্ষ, কাজের স্বচ্ছতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, উন্নত জীবনযাপন ও সর্বোপরি সুস্থ জ্ঞান চর্চায় লাইব্রেরি হতে পারে পরম বন্ধু।
ডিআইইউ লাইব্রেরিতে লাইব্রেরি ক্যাফে
একটি ক্রমবর্ধমান জীব হিসেবে, চাহিদা ব্যবহারকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী লাইব্রেরি পরিষেবাগুলোর সহযোগিতা ও সুযোগ সুবিধা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যাফে লাইব্রেরি বা লাইব্রেরি ক্যাফে হলো সেই গৌরবময় ভ্যালু এডিশনগুলোর মধ্যে একটি- যা গত কয়েক দশক ধরে লাইব্রেরি ভবনে বলা হয়। ডিজিটাল বিপস্নব সত্ত্বেও পাঠকরা লাইব্রেরিতে ফিরে আসছে এমন সংস্থানগুলো অ্যাক্সেস করতে- যা অনলাইনে উপলব্ধ নয় বা কেবল এই শান্ত স্পটগুলোর পরিবেশ উপভোগ করার জন্য।
কখনো কখনো ব্যবহারকারীদের লাইব্রেরিতে শ্রমসাধ্য গবেষণায় জড়িত থাকতে হয়। ব্যবহারকারীরা যখন গবেষণার কাজে বিরক্ত বোধ করেন এবং তাজা মনের জন্য কিছুটা শিথিলতার প্রয়োজন হয়, তখন তারা স্ট্যাক এলাকার পাশে তৈরি করা ক্যাফে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারেন। এক কাপ কফি উপভোগ করার সময় পড়ার জন্য এটি আরও আকর্ষণীয় এবং মনোরম পরিবেশ হবে।
এই বিষয়ে, একটি লাইব্রেরির একটি ক্যাফে বা লাইব্রেরি ক্যাফে তাদের শিক্ষাগত কাজে ব্যবহারকারীদের স্ট্যামিনা পুনরায় চালু করতে পারে। এটি নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা বিধানের জন্য গ্রন্থাগারের কর্মীদের সময় বাঁচাতে পারে। তাই একটি লাইব্রেরি ক্যাফে বিশ্বকে আরও ইন্টারেক্টিভভাবে অধ্যয়ন এবং অন্বেষণ করার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে। এভাবে একটি লাইব্রেরি হতে পারে সৃজনশীলতা, কমিউনিটি, উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তার একটি পূর্ণ শক্তি কেন্দ্র। এই লাইব্রেরি ক্যাফেতে খাবার ও পানীয় সুবিধা, মেঝেতে বসার সুবিধা রয়েছে। স্বল্প সময়ের বিশ্রাম এবং ঘুমের সুবিধা এবং আরও অধ্যয়নের জন্য আপনার চিন্তাভাবনা পুনরায় শুরু করার জন্য সুন্দর পরিবেশ রয়েছে যাতে ব্যবহারকারীরা বেশি অধ্যয়নের জন্য তাদের মানসিকতা তৈরি করতে পারে।
ডিআইইউ লাইব্রেরিতে সিনেপেস্নক্স
একাডেমিক লাইব্রেরির লক্ষ্য ব্যবহারকারীদের সঠিক তথ্যে একাডেমিক সহায়তা এবং গবেষণার রেফারেন্স প্রদান করা। বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারকারীদের প্রত্যাশার সীমানা অতিক্রম করছে। ব্যবহারকারীরা শিক্ষার একটি নতুন ক্ষেত্র শেখার আশা করেন- যা আনন্দদায়ক হবে এবং যেখানে শব্দ, ফটোগ্রাফ এবং শিক্ষার কৌশলগুলো একসঙ্গে আসতে পারে এবং সেই সময়ের শেখার মেজাজের সময় অনুসরণ করতে পারে। ডিআইইউ লাইব্রেরি এই পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধাগুলোকে উন্মোচন করতে এবং কীভাবে লাইব্রেরিতে আসার জন্য ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে শিক্ষার একটি নতুন ক্ষেত্র নিয়ে ভাবছে। এই সংযোগে, ডিআইইউ লাইব্রেরি ব্যবহারকারীদের জন্য এবং ব্যবহারকারীদের অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য একটি আকর্ষণীয় সিনেপেস্নক্স যুক্ত করেছে। এতে শিক্ষাভিত্তিক তথ্যচিত্র, চলচ্চিত্র এবং থিয়েটারের পাশাপাশি বিশেষ বিষয়ে বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিভাগীয় প্রধানের সহযোগিতায় ব্যবহারকারীদের সিনেপেস্নক্স তাদের প্রয়োজন হিসেবে ব্যবহার করবে।
ভয়েস লাইব্রেরি
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থান থেকে আসে এবং তারা বাস, ট্রেন বা পরিবহণে যাত্রা করে। তারা ক্লাসে যোগ দিতে এবং বাডি ফিরতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অপচয় করে। এই সময় তারা বিভিন্ন বিষয় পড়ছেন- যা কোর্সের বাইরে এবং ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে সর্বাধিক সময় ব্যয় করে। ডিআইইউ লাইব্রেরিগুলো তাদের মূল্যবান সময় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এবং কীভাবে এই ভ্রমণ সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় বা উপভোগ করা যায়। ডিআইইউ লাইব্রেরি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভয়েস লাইব্রেরি তৈরি করেছে যাতে তারা সহজেই ভয়েস লাইব্রেরি সফ্টওয়্যার অ্যাক্সেস করতে পারে এবং ক্লাসে শিক্ষকদের দ্বারা শেখানো বিষয়ভিত্তিক পাঠ্য অডিও শিখতে এবং শুনতে পারে। প্রায় ১৫০টি পাঠ্যপুস্তক অডিও হিসেবে সম্পন্ন হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের স্মার্টফোন থেকে শব্দ ব্যবহার করতে এবং বিশেষ করে উচ্চারণ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত দিয়েছে- যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করে একটি নতুন আঙিনা- যা শিখতে খুবই আকর্ষণীয়। এখন ভয়েস লাইব্রেরি কোনো ঝামেলা ছাড়াই একটি অনলাইন শিক্ষাকেন্দ্র। আশা করছি, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ডিআইইউ শিক্ষার্থীরা এ ধরনের সেবা পেয়ে উপকৃত হবে।
ড. মিলন খান : গ্রন্থাগারিক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বিভাগীয় প্রধান, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট