সাধারণত প্রতি বছরই বৈশাখ মাসে তান্ডব চালায় কালবৈশাখী, বৈশাখ মাসে তান্ডব চালায় বলে এই ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় কালবৈশাখী ঝড়। যদিও এর আগে খবরে জানা গিয়েছিল, এ বছর চৈত্রের শেষভাগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে ৫ জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপকূলে একটি স্পিডবোট ডুবে দুই শিশু, গাছচাপায় ফটিকছড়িতে এক গৃহবধূ, লোহাগড়ায় এক কাঠ ব্যবসায়ী, ময়মনসিংহের নান্দাইলে ঘরে বজ্রপাতের কারণে বিস্ফোরণে দুই নারী, লক্ষ্ণীপুরের রায়পুরে নারকেল গাছ পড়ে এক বৃদ্ধ, কুমিলস্নার মুরাদনগরে গাছ পড়ে আরেক বৃদ্ধ ও বগুড়ার শজনে গাছের ডাল ভেঙে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা উল্টে গেছে, বিদু্যতের খুঁটি পড়ে গেছে, কয়েকটি স্থানে ঘর ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আমরা বলতে চাই, ঝড়ের তান্ডবে ৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ঘর ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে- যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যেভাবে ঝড়ের তান্ডবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সামনে আসছে তা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, বৈশাখে ঝড়ের আশঙ্কাকে সামনে রেখে যথাযথ প্রস্তুতিও নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে হবে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ দেশ, সঙ্গত কারণেই দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ ও যথাযথ প্রস্তুতির বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে চাই, ঝড়-বৃষ্টি বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ। এছাড়া দুর্যোগের কবলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে পস্নাবিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। বন্যা জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিষয়ও আলোচনায় আসে। ফলে এগুলোও আমলে নিতে হবে। নিম্নমানের নির্মাণ বা যে কোনো ধরনের অবেহলার কারণে দুর্ভোগ বাড়লে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আমরা বলতে চাই, এবারে কালবৈশাখী ঝড় সংক্রান্ত যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিন। ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে এটাও এড়ানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। একই সঙ্গে বজ্রপাতে মৃতু্যর হারও বেড়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক বজ্রপাত হচ্ছে মর্মে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। যা স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠার। প্রসঙ্গত, আমরা এটাও বলতে চাই, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষকের প্রাণহানিই ঘটে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া এটাও বলা দরকার, বিভিন্ন হিসাবে দেখা গেছে যে, দেশে বজ্রপাতে মৃতু্যর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে হাওরের তিন জেলা কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ফলে বজ্রপাতের বিষয়টি আমলে নিয়ে মানুষকে সচেতন করাসহ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, ঝড়ের তান্ডবসহ যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি জারি রাখতে হবে, মানুষকে সচেতন করতে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করে পুনর্বাসনেও উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব- যা আমলে নেওয়া জরুরি। সঙ্গত কারণেই এবারে ঝড়ের তান্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আমলে নেওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকবিলায় সংশ্লিস্নষ্টদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।