গতকাল শুক্রবার ইরানে নজিরবিহীন হামলার আগে ইসরাইলকে চুপিসারে কয়েকশ’ অত্যাধুনিক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। মিডল ইস্ট আইয়ের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে জানান, ‘বিপুলসংখ্যক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে ইরানে ইসরাইলের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আগে থেকেই ভালোভাবে অবগত ছিল।’
তবে আগে থেকেই বড় পরিসরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত করছে ইসরাইল। এরই অংশ হিসেবে ইরানে হামলার কয়েক দিন আগে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইসরায়েলে প্রায় ৩০০টি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়। অথচ ট্রাম্প প্রশাসন বলছিল, তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী।
ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরাইলে বিপুল পরিমাণে হেলফায়ারসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সে খবর এত দিন প্রকাশিত হয়নি।
গতকাল শুক্রবার রয়টার্সকে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভূপাতিত করতে মার্কিন সেনাবাহিনী সহায়তা করেছে।
হেলফায়ার হলো লেজারনিয়ন্ত্রিত আকাশ থেকে স্থলে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটাতে এ ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষভাবে উপযোগী নয়। তবে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য এটি কার্যকর।
গতকালের হামলায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ১০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। এসব বিমান নির্ভুল শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিশানা করে এবং কমান্ড সেন্টারগুলোর ওপর আঘাত হানে।
এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘হেলফায়ার ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় ও ক্ষেত্র আছে। এগুলো ইসরাইলের জন্য বেশ কার্যকর ছিল।’
গতকাল বিমান হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইরানি কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরাইল।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাক্সিওস গতকাল দুই ইসরাইলি কর্মকর্তার বরাতে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলি হামলার পরিকল্পনায় বাধা দেওয়ার শুধু ‘ভান’ করেছে। কার্যত তারা কোনো বাধা দেয়নি।
ট্রাম্প পরে বলেন, তিনি হামলার আগে ইরানকে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম গত মার্চে এই ৬০ দিনের সময়সীমার খবর প্রকাশ করেছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে গত ১২ এপ্রিল আলোচনায় বসে। এর ঠিক ৬১ দিন পর ইসরায়েল তেহরানে হামলা চালাল।
দুই মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আলোচনার পুরো সময়জুড়েই ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলাদাভাবে জনসমক্ষে কিছু জানাতে হয়নি। কারণ, ৭৪০ কোটি ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তির অংশ হিসেবে এটি আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল।