শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য
নতুনধারা
  ০৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে যখন অস্থিরতা বিরাজ করছে ঠিক তখনই সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়াতে চায় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের জন্য এ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) দেওয়া এক চিঠিতে লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের দাম ১৮৫ টাকা থেকে ২০৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯১০ থেকে ৯৬০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে বা সমন্বয় করতে কোম্পানিগুলো ট্যারিফ কমিশনকে প্রস্তাব দেয়। এরপর কমিশন তা পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী নির্ধারণ হয় তেলের মূল্য। দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ টন আমদানি হয়।

এটা সত্য, দেশের সয়াবিন তেলের বাজারে আবারও নৈরাজ্য শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর আগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লক্ষ্যে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কেটেছে। আর এখন তেলের মূল্য বাড়িয়ে আবারও জনগণের পকেট কাটার পাঁয়তারা করছে। বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো ঘাটতি না থাকলেও অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে একাধিকবার। এখন আবার তারা দাম বাড়াতে চায়। সরকারকে দ্রম্নত এসব অসৎ, মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ৯ মাসের মাথায় ফের ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এবার অকটেন ও পেট্রোলের দামও বেড়েছে। এক লাফে ৪৭ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রায় সর্বত্র। বাস ভাড়া থেকে শুরু করে সিএনজি রিকশা এবং নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বহুল আলোচিত এবং বাজার সংস্কৃতিরই অংশ। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে, তা আর কখনোই আগের দামে ফিরে যায় না। মনে রাখতে হবে, এর চাপ পড়ছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। এটা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অশুভ বার্তা। প্রথমে করোনা এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ল। এর পাশাপাশি যদি ভোজ্যতেল লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ে তা হলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছবে। আসলে পণ্যের সরবরাহ বা সংকটের সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা হচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীদের হীনমানসিকতা। এটা তাদের ব্যবসায়িক অসুস্থ সংস্কৃতি। এটা হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। এই কারসাজির কারণেই বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে