শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩ আশ্বিন ১৪৩০
walton
পাঠক মত

তবে কি জ্ঞানের ক্ষুধা অপূর্ণই থেকে যাবে!

নতুনধারা
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

এই জেনারেশন কতটা বই বিমুখ তা এদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই বোঝা যায়। অন্তঃসারশূন্য হয়তো এদেরই বলে। গদবাধা মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া এরা আর কিছুই করতে চায় না। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কোনো লেখকের নাম, বইয়ের নাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য কিছুই তেমন কারোরই জানা নেই। অথচ একটু পেছন ফিরে তাকালেই দেখা যায়, আমাদের পূর্বপুরুষরা যত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য সম্পর্কে জানে তার সিকি ভাগও আমাদের কারও জানা নেই। সাহিত্য আড্ডা নিয়ে আমাদের অনীহার শেষ নেই। সৃজনশীলতায় কারও কোনো আগ্রহ নেই। বই পড়ার নাম শুনলেই নাক শিটকাই। কোথায় আমাদের আগ্রহ, কোথায় আমরা সময় ব্যয় করব, কীভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করব, জ্ঞানের ভান্ডার কী করে আরও উন্নত করব তা সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন একটা গোটা জেনারেশন যারা কিনা একটা সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ। আড্ডা, ঘোরাঘুরি, সেলফি, মোবাইল গেম আসক্তি, টিকটক ভিডিও বানানোতে কেটে যায় একটা গোটা জেনারেশনের মূল্যবান সময়। পুঁথিগত বিদ্যা এবং চাকরির বাজারে আগে থাকার জন্য দম বন্ধ করে মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া অন্য কোনো জ্ঞানের অন্বেষণ নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। পরিণতি? দিনশেষে হতাশা, প্রাপ্তির খাতার শূন্য। বড়দের থেকে নিজেকে পন্ডিত ব্যক্তি ভেবে নেওয়া এবং নিজেকে সর্বেসর্বা ধরে নেওয়া একটা বর্বর জেনারেশনে পরিণত হচ্ছি আমরা। একাডেমিক রেজাল্ট ছাড়া আর কোনো অর্জন আছে কিনা দ্বিধান্বিত সে বিষয়ে। যখন কোনো সিনিয়র ব্যক্তি ইতিহাস, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করে, কিছু জিজ্ঞাসা করে তখন চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। কারণ আমরা জানার চেষ্টাও করি না ইতিহাস কী! এ দেশের ইতিহাস কেমন ছিল, এ ভাষার ইতিহাস কোথা থেকে, আমাদের পূর্ব-পুরুষের ইতিহাস কী? সাহিত্য বিষয়ে আমাদের জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। অথচ বাঙালি মানেই কিন্তু সাহিত্যপ্রিয়, কেউ একটু বেশি কেউ বা একটু কম। আর সাহিত্যিক বলতে আমরা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেগম রোকেয়া, মীর মোশাররফ হোসেন, জীবনানন্দ দাশ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, কবি সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ুন আজাদ, বর্তমানের জনপ্রিয় লেখক আহমদ ছফাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের জানি। আমাদের জেনারেশন থেকে এসব সাহিত্যিকদের বিখ্যাত সব বই কিংবা উক্তি কিংবা সাহিত্যের নামও বলতে পারব না সঠিকভাবে। অনেকে আবার এসব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামও জানি না। এমনকি চিনিও না কাউকে। কিন্তু আমাদের পূর্ব-পুরুষরা দেখেন! তাদের প্রতিটি বই, সাহিত্য, কবিতা, রচনা, উপন্যাস সম্পর্কে প্রশংসনীয় এবং অভাবনীয় জ্ঞান রাখেন। যেসব কবিতা দেখে আমাদের চোখের, জল নাকের পানি এক হয়ে যায়, আবার এমনও কবিতা আছে যা আমরা নামও শুনিনি কখনো সেসব বড় বড় কবিতা, মহাকাব্য, বিখ্যাত সব উক্তি এক নাগাড়ে মুখস্থ বলে যেতে পারেন তারা। গড়পড়তার জিপিএ ফাইভের এই দেশে পাঁচজন বই পড়ুয়া খুঁজে পাওয়া যাবে না যে প্রকৃতই বই পড়ুয়া, পুঁথিগত বিদ্যা ছাড়া প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত। এই আমার কথা বলতে গেলেই আমার বাবা যখন আমাকে 'তুঘলকি কান্ড' সম্পর্কে আমার ধারণা কী জিজ্ঞাসা করল তখন আমি নির্বোধের মতো জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কী জিনিস? কারণ আমি এর আগে এ বিষয় সম্পর্কে শুনিনি, জানতেও চেষ্টা করিনি। এর থেকেই বোঝা যায় আমরা কতটুকু শিক্ষিত, কতটুকু জ্ঞানী! সামান্য কয়েক লাইনের কোনো গল্প বা ছোট কবিতা পড়তে আমাদের এণ অলসতা যা পাহাড়সম। একটা বই পড়তে সময় হয় না আমাদের। এমন একটা জেনারেশনের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে তা সত্যি শংকার বিষয়। হয়তো আর মাত্র কয়েক বছর পরে পুঁথি সংগ্রহের মতো জাদুঘরে সংগ্রহ করতে হবে আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের বাংলার গৌরব সাহিত্য। আজকের বাংলাদেশের পেছনের এণ গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, আমাদের মাতৃভাষার পেছনের যে ত্যাগের ইতিহাস, সাহিত্যের অবদান, সাহিত্যিকদের চমৎকার সব সৃষ্টি, চিন্তার জাদু সবটা রূপকথার গল্পের মতো শোনাবে অচিরেই। এই ঐতিহ্য, ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে এই জেনারেশনসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জ্ঞানের ক্ষুধা বাড়ানোতে, বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাহিত্য আড্ডার হস্তক্ষেপ খুব বেশি প্রয়োজন। নতুবা পুঁথিগত বিদ্যার শিক্ষায় শিক্ষিত রোবট মানুষ অন্তঃসারশূন্য নিজস্ব সৃজনশীল চিন্তাকে কবর দিয়ে অকল্পনীয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতে তলিয়ে যাবে। জাতির বিবেক, জ্ঞান, চেতনাকে সমৃদ্ধ করতে, উৎকৃষ্ট করে তুলতে, বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার দ্বার উন্মোচন করতে বই পড়ার, ইতিহাসকে জানার বিকল্প নেই। 'বই মানুষকে সমৃদ্ধ করে, মনের ক্ষুধা মেটায়।'

হুমায়রা আনজুম

শিক্ষার্থী

ল' অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
shwapno

উপরে