বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে অনলাইন জুয়ার বিষয়টি। অনলাইন জুয়ায় যেমন অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছে, তেমনি ঘটছে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, সারাদেশে মাদকের মতো ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন জুয়া। অন্যদিকে, জুয়ায় আসক্তদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাদকের মতো অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে বহু তরুণ। এমনকি জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে আত্মহত্যা করার ঘটনাও ঘটছে। আমরা বলতে চাই, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই জুয়া সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
তথ্য মতে, গত তিন মাসে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে- যার মধ্যে অধিকাংশ টাকাই পার্শ্ববর্তী একটি দেশে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে গেছে বলেও প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো। অনলাইন জুয়ার এক মাস্টারমাইন্ডসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটাই জানিয়েছের্ যাব। জানা যায়, ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর পর বিদেশ থেকে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার অনেকগুলো সাইট পরিচালিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাইটগুলো এ দেশে পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
আমরা বলতে চাই, অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এমন পরিস্থিতি সন্দেহাতীতভাবেই ভীতিপ্রদ। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা এবং আইনের প্রয়োগ ও সচেনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমও অব্যাহত রাখা। বলা দরকার, এর আগে এমনটিও খবরের মাধ্যমে জানা গিয়েছিল যে, সারাদেশে অনলাইন জুয়াড়িদের বিশাল নেটওয়ার্ক আছে। প্রথম দিকে কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে খেললেও শেষ পর্যন্ত জুয়ায় আসক্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আসক্তরা ঘরে বসেই বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে অনলাইনে দেশে ও বিদেশে জুয়া খেলছেন। ফলে সার্বিক বিষয়গুলোকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা বলতে চাই, দেশে সব ধরনের জুয়া আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ফলে অনলাইন জুয়ার প্রসার ঘটবে মানুষ আসক্ত হয়ে পড়বে এবং ঘটতে থাকবে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা- এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
উলেস্নখ্য, গত ২৩ অক্টোবর রাতের্ যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা,র্ যাব-১ ওর্ যাব-১১ এর সমন্বয়ে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও ঢাকার মালিবাগে অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার করা হয় অনলাইন জুয়ার সাতটি সাইট পরিচালনার অন্যতম মূল মাস্টারমাইন্ড নিশাত মুন্নাকে। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী আরও তিনজনকে। জানা যায়, এই চক্রটি দেড় বছর ধরে সক্রিয়। এর মধ্যে গত তিন মাসে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এটাও সামনে এসেছে যে, সারাদেশেই তাদের নেটওয়ার্ক আছে। বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টরাও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। চক্রের প্রধান নিশাত মুন্না আটজনের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করছিলেন।
আমরা বলতে চাই, জুয়া সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এর আগে এটা জানা গিয়েছিল যে, শহরের ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেই লুডু খেলার অ্যাপস মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলছেন। আবার অনেকেই বাজি ধরে খেলছেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টিও আমলে নেওয়া দরকার, বাজিও এক ধরনের জুয়া। যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ তা যদি ঘটতে থাকে তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। ফলে আইনের প্রয়োগ যেমন ঘটাতে হবে, তেমনিভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। জুয়ার কুফল সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। এবারে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একইসঙ্গে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকবে এমনটি কাম্য।