বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব

ভোটের মাঠে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে অন্য প্রার্থী ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা নির্বাচন বিরোধী কার্যকলাপ। নির্বাচন পরিপন্থি কোনো আচার-অনুষ্ঠান নির্বাচন প্রচার কার্যক্রমে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
মাহমুদুল হক আনসারী
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব

ভোট একটি আমানত। সাংবিধানিক অধিকার। নাগরিক অধিকার। রাষ্ট্রের, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় নিরাপত্তা রাজনীতির জন্য ভোট একটি রাষ্ট্রীয় এবং নাগরিক অধিকার। দেশের যারা নাগরিক ভোট প্রদানে সক্ষম তারাই ভোট প্রদান করে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকারকে গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে ভোট, ভোটার এবং প্রার্থীর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। ভোটারের যেভাবে গুরুত্ব প্রার্থীর গুরুত্বও কম নয়। ভোট আদান-প্রদানের সুষ্ঠু সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ রক্ষার জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশন রয়েছে। এই কমিশন স্থানীয় জাতীয় পর্যায়ের সব ধরনের নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে। তফসিল থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো- সাংবিধানিকভাবে পরিচ্ছন্ন, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত একটি নির্বাচন দেশ এবং জনগণকে প্রেজেন্টেশন করা।

নির্বাচনে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা নিবন্ধিত দলগুলো অংশগ্রহণ করে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকে। তারা তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জনগণের মুক্তির জন্য তাদের বক্তব্য জন সম্মুখে পেশ করা। জনগণের অধিকার প্রাপ্য সাংবিধানিকভাবে তাদের জন্য সব ধরনের সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রম্নতি প্রদান করে। সেই জায়গায় ভোটার তাদের পছন্দনীয় দলের প্রার্থীকে ভোট ও মতামত প্রদান করে জয়ী করার জন্য অংশ নিয়ে থাকে। যেহেতু ভোট জনগণের মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে মতামত ভোটের মাধ্যমে দেশের নাগরিক প্রদান করে থাকে। এই ভোট প্রদানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনিয়ম দুর্নীতি, জোর জবরদস্তি প্রেশার ক্রিয়েট করে কারো ভোট আত্মসাৎ করার অধিকার সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থি। নির্বাচন কমিশনের যতসব নিয়মনীতি রয়েছে তার মধ্যে জনগণের ভোট প্রদানে বাধা প্রয়োগে কোনো বিধান নেই।

রাষ্ট্রকে সুশৃঙ্খল, সুন্দর, গতিশীল ও একটি পরিকল্পিত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালনা করার জন্য যুগ্ম নেতৃত্ব দরকার। জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে পার্লামেন্টে গিয়ে থাকে। সেখানে সংসদ সদস্যরা দেশের জনগণের সুখ-দুঃখ, সমস্যা, সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয় সবকিছু তুলে ধরেন। সেখান থেকে তারা নিজ নিজ এলাকার জন্য জনগণের দাবি দাওয়া পূরণ করার জন্য সবকিছু পাস করিয়ে আনেন। তাই জাতীয় সংসদের সদস্যদের যোগ্যতা, ক্ষমতা, সততা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেখেই তাদের ভোট প্রদান করা দরকার। যাদের দলীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও আমানতদারি রয়েছে। জনগণের প্রতি ভালোবাসা প্রদান করার ও আদায় করার যোগ্যতা রয়েছে সেইসব সাংসদদের ভোট প্রদান করার দরকার। দুর্নীতিবাজ, অসৎচরিত্র, কালো টাকার মালিক, রাষ্ট্রদ্রোহী কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত, মাদক, নারী ও শিশু পাচারকারী অসৎচরিত্রের কোনে ব্যক্তিকে যেন জনগণ ভোট না দেয়। যোগ্য ও আদর্শবান নেতাকে নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদের পাঠাতে পারলেই নিজ নিজ এলাকার সমৃদ্ধি উন্নতি অগ্রগতি সম্ভব। তাই ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমানত হিসেবে এই ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে। যারা দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি অগ্রগতি চিন্তায় চেতনায় বাস্তবায়ন করবে সেই ধরনের নেতৃত্বকে নির্বাচিত করা ভোটারদের দায়িত্ব। ভোটকে রাতের আঁধারে নগদ অর্থের বিনিময়ে সামান্য সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে অসৎ, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ কোনো প্রার্থীকে বিজয় করা দেশ এবং রাষ্ট্র জনগণের কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়।

ভোটের মাঠে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে অন্য প্রার্থী ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা নির্বাচন বিরোধী কার্যকলাপ। নির্বাচন পরিপন্থি কোনো আচার-অনুষ্ঠান নির্বাচন প্রচার কার্যক্রমে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪-এ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ইনশাআলস্নাহ অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে নিয়ে ইতোমধ্যেই সারাদেশের সব সংসদ সদস্য বা প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে জোর তৎপর। প্রচার-প্রচারণা চলছে। সেই প্রচার-প্রচারণায় এলাকায় এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়া, অন্য দলের সমর্থকদের ওপর হামলা ও আক্রমণ, মিথ্যা মামলার নানা ধরনের উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই জনগণ দেখতে পাচ্ছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া হাটহাজারী প্রায় সবগুলো আসনে নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এক প্রার্থীর সমর্থক অন্য প্রার্থীর কর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে মারপিটে অংশ নিচ্ছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এক প্রার্থীর পোস্টার আরেক প্রার্থীর কর্মীরা ছিঁড়ে ফেলছে। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট থানা ও নির্বাচন কমিশন বরাবরে অভিযোগ মামলায় জমা হয়েছে। ফলে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে আনন্দ উদ্দীপনা তৈরি করতে হবে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভোটাররা নীরবে উদ্বিগ্নহীনভাবে আনন্দঘন পরিবেশে কেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের হাঙ্গামা বিশৃঙ্খল পরিবেশ নির্বাচনকে নষ্ট করবে। নির্বাচনবিরোধী, ভোটবিরোধী সব ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ বর্জন করতে হবে। রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনের প্রার্থীদের সেই জায়গায় কঠোরভাবে সংযম প্রদর্শন করতে হবে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট প্রদানের মাধ্যমে যে বা যারা বিজয়ী হবে তাদেরই জাতি বরণ করে নেবে। আসুন আমরা সব ধরনের নির্বাচনবিরোধী বিশৃঙ্খল পরিবেশ বর্জন করি। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাপ্ত করতে এগিয়ে আসি। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- ঐক্যবদ্ধ হই।

মাহমুদুল হক আনসারী : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে