এসে গেছে শীত। কুয়াশায় অন্ধকারাচ্ছন্ন সকাল আর দীনের বেলায় কনকনে শীতল বাতাস ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে তার আগমনের বাণী। যা এখন রীতিমতো উদ্বেগ ছড়াচ্ছে শীতার্তদের মধ্যে। কারণ, আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে রাস্তার পাশে, রেলস্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে কোনো রকম একটা গরম কাপড় নিয়ে রাত্রিযাপন করছে। কেউ আবার গরম পোশাক না পেয়ে সারারাত আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এটা কিন্তু বাস্তব ঘটনা। আসুন, আমরা সবাই নিজেদের সাধ্যমতো শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসি।
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রকোপে পড়ে নিদারুণ কষ্ট ও দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গরিব, দুঃখী, বস্ত্রহীন শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ। কারণ, তাদের কাছে নেই শীত নিবারণের জন্য তেমন কোনো বস্ত্র। অনেকেই ভুগছেন ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায়। শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট বাড়ছে বহুগুণে। টাকার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে তাদের চিকিৎসাসেবা। সরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা পেলেও পর্যাপ্ত ওষুধ না পাওয়ায় রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেই পার করছে দিনের পর দিন। অনেকেই রোগের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় জানাচ্ছেন পৃথিবীকে। সেই সঙ্গে বর্তমানে যোগ হয়েছে সন্তানদের নিষ্ঠুরতা। অনেক মা-বাবা আছেন, যারা সন্তানদের অবহেলার স্বীকার হয়ে পার করছে দুর্বিষহ জীবন। সন্তানরা পাকা ঘরে দামি দামি কম্বল, লেপ জড়িয়ে শীতের মজা উপভোগ করলেও অসহায় বৃদ্ধ মা-বাবার ঠাঁই হচ্ছে রাস্তার পাশে টিনের ছাউনিবেষ্টিত পরিত্যক্ত ঘরে। কেউবা আবার সন্তানদের কাছে জায়গা না পেয়ে রাত্রিযাপন করছে খোলা আকাশের নিচে। অনেকেই সেই ছবি তুলে শেয়ার করছে বিভিন্ন অনলাইন পস্ন্যাটফর্মে। কেউবা আবার পাগল বলে হাসি-রসিকতায় আনন্দ দিচ্ছে নিজের নিবোর্ধ মনটাকে। সভ্যতার এই যুগে এমন ঘটনা সত্যিই হৃদয়বিদারক।
আমরা চাইলেই শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের শীতের রাতগুলো করে তুলতে পারি বেদনামুক্ত। হয়তোবা, আমাদের কারও একার পক্ষে কাজটা অনেক কঠিন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে যদি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসি, তাহলে হয়ত খুব একটা অসম্ভব কিছু বলে মনে হবে না। এ জন্য আমরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের মহতী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শীতার্তদের সাহায্য করতে পারি। কিছু মানুষের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ খুব ভালো লেগেছে। শীতবস্ত্র বিতরণের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় বিতরণ করলে অনেক সচ্ছল মানুষও শীতবস্ত্র নিয়ে যায়। এতে প্রকৃত অসহায়রা থেকে যায় নাগালের বাইরে। তাই তারা রাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। যাতে প্রকৃত অসহায় মানুষগুলো এই দানে উপকৃত হয়। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, হে প্রভু; এদের উত্তম প্রতিদান দিন। চাইলেই আমরা সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যেন উপযুক্ত পাত্রের হাতেই আপনার দান পৌঁছায়।
আসুন আমরা সবাই শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে যাই, যারা অপেক্ষায় বসে আছেন, হয়তো সৃষ্টিকর্তা তাদের কাছে এমন কাউকে পাঠাবে, যিনি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাদের গায়ে একটা কম্বল জড়িয়ে দেবে, গরম কাপড় তুলে দেবে শিশুদের গায়ে, যাতে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানবতার ধর্ম। একজন মানুষের জীবন তখনই সার্থক হয়, যখন সে মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে। তাই অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। আসুন, আমরা সবাই স্বামী বিবেকানন্দের সেই মহান বাণী নিজেদের মধ্যে ধারণ করি, 'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।'