সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী সহিংসতা

কার্যকর উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে যে কোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিবন্ধক। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি মারামারি, সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, একের পর এক নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা সংঘাত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। নির্বাচনী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এছাড়া অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে গত ২৮ অক্টোবর থেকে দুর্বৃত্তরা সহিংসতা ও নাশকতা করে আসছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৭১ দিনে সারাদেশে দুর্বৃত্তরা মোট ৩০৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় ৩০২টি যানবাহন ও ২৩টি স্থাপনা পুড়ে যায়। নিহত হন ৮ জন। আহত হয়েছেন ৫ জন। অগ্নিকান্ড নির্বাপণ করতে সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৫৩৯টি ইউনিট ও ২ হাজার ৯৫৯ জন কাজ করেন। ফলে এই ধরনের সহিংস পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অন্যদিকে, জানা যাচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অন্তত ২৩ জেলায় ৪২টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৪ জেলার ২১টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সময় চার জেলায় চার নির্বাচনী ক্যাম্প ও দুই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সাত জেলায় ১১টি যানবাহন ও চার জেলায় চারটি স্থাপনায় (ভোটকেন্দ্র নয় এমন বিদ্যালয়) আগুন লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া দুটি জেলায় ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ২২টি যানবাহন। আমরা বলতে চাই, নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ, যথাযথ নিয়মনীতি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে, এমনটি প্রত্যাশিত হলেও, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে- যা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। যদি একের পর এক নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে, সেটিও আমলে নেওয়া জরুরি। ফলে সামগ্রিকভাবে সহিংসতার ঘটনা এড়ানোর যেমন সুযোগ নেই, তেমনি পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এটাও বলা দরকার, নির্বাচনের আগে নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এটা যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি লক্ষণীয়, ভোটের দিনও সহিংসতার খবর জানা গেছে। তথ্য মতে, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করার বিষয়টিও সামনে আসে। এছাড়া চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী) আসনের পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্রে দুইপক্ষের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। রাজধানীর হাজারীবাগ বটতলা এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। উলেস্নখ্য যে, এভাবে ভোটের দিন অর্থাৎ রোববারও সহিংসতার ঘটনা ঘটার বিষয়টি সামনে আসে। এছাড়া কেন্দ্র দখলের চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও খবরে উঠে আসে। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে নির্বাচনকেন্দ্রীক সহিংস পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনপূর্ববর্তী যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে নির্বাচন পরর্তী সময়ে কেউ যেন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে এবং কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে সহিংসতার ঘটনা আমলে নিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে নির্বাচনপরবর্তী সময়ে যেন সংঘাত-সহিংসতা না ঘটতে পারে সেটিকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। মনে রাখা দরকার, যে কোনো সংকট সমাধান হতে পারে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে। কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতেই সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়। সঙ্গত কারণেই নির্বাচনী সহিংসতা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে