বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো সচ্ছল মানুষের নৈতিক দায়িত্ব

মো. আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো সচ্ছল মানুষের নৈতিক দায়িত্ব

সারাদেশে পৌষের হাড়-কাঁপানো শীত নেমেছে। পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা নেমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আগেভাগেই প্রকৃতিতে শীত আসার কথা জানান দেয়। শীতের মাস পৌষেই হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতিতে নামে নীরবতা। এই মুহূর্তে বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবও নেই সমুদ্রে। যে কারণে শীতের শুষ্কতার ছোঁয়া চারদিক। পাখিরা গাছের ডালে জবুথবু হয়ে থাকে। জমে যায় ঘাসের উপর শিশির বিন্দু। একসময় শীতকালে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যেত গ্রামের প্রতিটি ঘরে। খেজুর রসের সঙ্গে ভাপা পিঠা খাওয়ার সেই সোনালি দিনগুলো এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না।

উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের কাছে শীতের দিন উৎসবের সময় হলেও নিম্ন্নবিত্ত এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য এই শীত নিয়ে আসে এক ভয়াবহ দুর্ভোগ। শীতে উত্তরাঞ্চল, দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও গ্রামাঞ্চলে সাত-সকালে দেখা মিলবে অসংখ্য দুঃখী মানুষের। গৃহহীন মানুষ, পথশিশুদের কষ্টের কোনো শেষ থাকে না শীতকালে। সড়কের পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা অনেক অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তারা খোলা আকাশের নীচে গায়ে ছালা আর শরীরে ছেঁড়া কাপড় জড়িয়ে কোনোমতে শুয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে ঠান্ডায় কুঁকড়ে উঠছে। পাশে কুকুর, বিড়ালের আনাগোনা। ওরা তো অসহায়, ওদের কাছে নেই কোনো দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো উপাদান! আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘ রাত সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে। যার পেটে ভাত নেই তার গায়ে গরম কাপড় জুটবে কিভাবে! আমরা কি পারি না তাদের সাহায্যে একটু এগিয়ে আসতে?

শীত এলে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা শোনা যায়। সমাজের সামর্থ্যবান জনদরদি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার ইত্যাদি গ্রামে গ্রামে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। তরুণ যুবকেরা মহলস্নায় মহলস্নায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো কাপড় সংগ্রহ করেন এবং তা গরিবদের মধ্যে বণ্টন করেন। শীত এলে এসব ছিল চিরচেনা সামাজিক কর্মকান্ড। এবার সেই উৎসাহ-উদ্দীপনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের সাধারণ বিচার-বিবেচনায় সামান্য সমাজ অধ্যয়নে যেটি মনে হয়, সেটি হলো জাতি, রাষ্ট্র, সমাজ এসব ধারণার সঙ্গে মানুষের একাত্মতার বোধ শিথিল হয়ে পড়েছে।

শীতে অসহায় মানুষের সাহাযার্থে এগিয়ে আসতে দেখা যায় অনেককে যা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। কেবল মিডিয়া কভারেজ কিংবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যদি এই সাহায্য প্রদান হয় তাহলে তা কখনো সুফল বয়ে আনবে না। সাহায্য, সহযোগিতা হতে হবে নিঃস্বার্থ, সৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ। শীতার্ত মানুষের সাহায্যার্থে প্রথমে এগিয়ে আসার কথা রাষ্ট্রের। নানা সংস্থা, সংগঠনকেও শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। মিডিয়া চাইলে তাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিতে পারে। চাইলে গণমাধ্যম কর্মীগণ শীতার্তদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করতে পারেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের।

এজন্য দেশব্যাপী শীতার্ত মানুষের একটি তালিকা করা যেতে পারে। এ কাজে প্রয়োজনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনকেও কাজে লাগানো যায়। তালিকা ধরে প্রত্যেক শীতার্ত মানুষের কাছে শীতবস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য পাঠানোর কাজটি সরকার করতে পারে। তবে, শীতার্ত মানুষের এসব বস্ত্র, অর্থসহ সব সাহায্য যেন দুর্নীতিমুক্ত ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুর্গতদের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিতরণ ব্যবস্থা যেন ত্রম্নটিমুক্ত হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। অন্যান্য সংস্থাও তাদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ সমন্বিত একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে পারলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা করা যাবে। মানুষের অসহায়ত্বের এমন দৃশ্য মুছে দিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় মানুষের প্রতি আমাদের মমত্ব ও ভালোবাসার। আমরা চাইলেই এসব দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। এর জন্য কি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া প্রয়োজন? একটি পুরনো কিংবা নতুন শীতবস্ত্র একজন শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের অবলম্বন হতে পারে। সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সবারই নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের উপার্জিত অর্থের সামান্য পরিমাণও যদি এসব অসহায়দের জন্য আমরা বরাদ্দ করি তাহলে বিন্দু বিন্দু সে দান শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই রচিত হবে মানবিক সেতুবন্ধন। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে