বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
দুর্নীতি আর উন্নয়ন একসঙ্গে নয়। রাজনীতি অর্থনীতি উন্নয়ন ও দুর্নীতি একাকার। রাজনীতির অর্থ জনসেবা। রাজনীতির মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন রাতারাতি আঙুুল ফুলে কলাগাছ এই সংস্কৃতি এখন আমাদের দেশে রাজনীতির মাঠে দৃশ্যমান। রাজনীতি অর্থ জনগণ যেটি বুঝে সেটি হলো মানবসেবা, জনসেবা, দেশ ও রাষ্ট্র সেবা। ব্যক্তি রাজনীতি থেকে দলীয় রাজনীতির সব ক্ষেত্রে জন ও দেশসেবার যেই উদ্দেশ্য এবং সংস্কৃতিতে রাজনীতির উৎপত্তি সেই রাজনীতি এখন বলতে গেলে অদৃশ্য। দেশ স্বাধীনের আগে থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত যেসব নেতার নেতৃত্ব জনগণ দেখছিল এবং পেয়েছিল সেই গৌরবোজ্জ্বল রাজনীতি ও নেতৃত্ব এখন আর রাজনীতির মাঠে নেই। সেই নেতাও নেই, নেতৃত্ব এবং সেই রাজনীতি দেশে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বর্তমান রাজনীতি দল পরিচালনা নির্বাচন ভোট ভোটার সবকিছুর মধ্যেই একটা বড় ধরনের বিবাধ বিরোধ তৈরি হয়েছে।
রাজনীতি বর্তমান সময়ে দিনে রাতে বেচা-বিক্রি হচ্ছে। রাজনীতির কর্মসূচি বক্তব্য শাসকগোষ্ঠীর চিন্তা চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য ও পরিকল্পনা করে চালানো হচ্ছে। কর্মসূচি কথাবার্তা আন্দোলন সংগ্রাম সব কিছুতেই ক্ষমতাসীন শাসক দলের নিয়ন্ত্রণের মধ্য থেকে পরিচালনার যথেষ্ট ইঙ্গিত এবং কার্যকলাপ জনগণ দেখছে। গণতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনা রাজনীতি এসব বিষয়ে ছিল জনসেবা দেশসেবা রাষ্ট্র পরিচালনা। সেই রাজনীতি রাষ্ট্র পরিচালনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখন মুখ্য উদ্দেশ্য হয়েছে ক্ষমতায় আরোহণ। যেকোনো পন্থায় চিন্তা এবং জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। এই যদি হয় রাজনীতির উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা তাহলে সেই জায়গায় দেশ ও জনগণের সেবা তাদের সুখ-দুঃখ ব্যথা-বেদনা ও সহমর্মিতার স্থান কোথায়। গণতন্ত্র রাজনীতি নির্বাচন ভোটাধিকার এবং মতামত ব্যক্ত করার যেসব নাগরিক অধিকার সেই অবস্থা পরিবেশ আজকে কোন পর্যায়ে। দিন যত যাচ্ছে নাগরিক অধিকার ভোটাধিকার রাজনীতির পরিবেশ চরমভাবে বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। কারণ রাজনীতিতে ব্যক্তি দল এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ভালোবাসা দেশপ্রেমিক দায়িত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে।
পদ-পদবি জনপ্রতিনিধির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল স্থান এবং পদগুলো অর্থের মাধ্যমে বেচাবিক্রি হচ্ছে। রাজনীতির পদবি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রধান দলের হাইকমান্ড থেকে নিয়ন্ত্রণ ও বণ্টন হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতা নেতৃত্ব পদ-পদবি বণ্টন ওপরের নির্দেশ হাইকমান্ড সিলেকশন করছে। সেখাে শোনা যায় এবং অভিযোগ আছে লাখ ও কোটি টাকার অর্থের লেনদেন হচ্ছে। অর্থের মাধ্যমে পদ-পদবির বেচাবিক্রি। নেতার নেতৃত্ব যোগ্যতা রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দেশপ্রেমিক জনদরদি ভ্রাতৃত্ববোধ অর্থের কাছে পরাজিত। যেভাবেই হোক অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবি চাই। আর সেটি হলো ক্ষমতাসীন দলের হতে হবে। এই সংস্কৃতিতে বর্তমানে রাজনীতি চলতে দেখছি। ফলে রাজনীতি এখন প্রায় কলুষিত। জনগণ বর্তমান প্রচলিত রাজনীতি কর্মসূচি নেতৃত্ব আচার অনুষ্ঠানকে বয়কট করছে। অর্থ ছিটিয়ে কতিপয় দল নেতাকর্মী সংগ্রহ করছে। যতক্ষণ অর্থ বিলি বণ্টন সেই পর্যন্ত নেতাকর্মীর মিলনমেলা অর্থ যেখানে শেষ, সেখানে মিলনমেলা আন্দোলন সংগ্রাম থেমে যায়। রাজনীতিতে এখন আদর্শ চরিত্রবান যোগ্য নেতৃত্বের সব দলের মধ্যেই যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত। যেখানে অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে নেতা নেতৃত্ব পদ-পদবি বেচাবিক্রি হয়, সেখানে সঠিক আদর্শ নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া অথবা প্রতিষ্ঠিত করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই রাজনীতিতে দুর্নীতি অর্থ লুটপাট ক্ষমতার ব্যবহারে রাতারাতি আঙুুল ফুলে কলাগাছ, গাড়ি বাড়ি অট্টালিকা সম্পদের মালিক হওয়া কঠিন কোনো বিষয় নয়। রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে যারা ব্যবহার করতে পেরেছে সমাজে তারাই অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে।
কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে স্থানীয় রাজনীতি পর্যন্ত এখন যেসব নেতা, এমপি, মন্ত্রী অথবা স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি তারা বহু অর্থের মালিক। তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা না থাকলেও শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তাদের অর্থ সম্পদের যেই পাহাড় সেই জায়গায় জনগণ ভাবনায় না পড়ে পারে না। জনগণ যেখানে দুই বেলা ডাল-ভাতের সংস্থান করতে পারে না সেখানে জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে এত অর্থ সম্পদের মালিক হয় সে জায়গায় জনগণের মাথা হেট হয়ে যায়। জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনী হলফনামার হিসাব-নিকাশ দেখে জাতি আঁতকে ওঠে। হায়রে দেশ, হায়রে উন্নয়ন, হায়রে জনগণ। আমরা যাচ্ছি কোথায়, কোথায় আমাদের গন্তব্য। শুধু লুটপাট আর হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশকে অর্থশূন্য করে সেই লুটপাটকারীরাই আজকে দেশের নেতা এবং জনপ্রতিনিধি। তারাই আবার নির্বাচন করবে জয়যুক্ত হবে। পুনরায় লুটপাট ও অর্থ পাহাড় গড়ার স্বাদ গ্রহণ করবে। অর্থ লুটপাটের সংবাদে সাধারণ জনমনের মধ্যে চরম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এতো অর্থ পাচার করে আবার তাদের ব্যাপক অর্থ জমা সম্পদ এসব জনগণ দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। লাখ কোটি টাকার উন্নয়নের দৃশ্যমান চিত্র দেখে একদিকে আনন্দ উদ্দীপনা খুশি অনুভব হলেও পক্ষান্তরে দুর্নীতিবাজদের অর্থ পাচার অর্থের পাহাড় দেখলে অন্তরটা খান খান হয়ে যায়। হায়রে দেশ, এত দুর্নীতি এত অর্থ পাচার স্বাধীনতার এই অর্ধশতকের মধ্যেই। আমাদের সঙ্গে পৃথিবীর যেসব দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তারা আজকে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, আর আমরা কোথায়। আমরা দুর্নীতি, অর্থ পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ পকেটস্থ করার সংস্কৃতিতে জড়িয়ে গেছি। এই সংস্কৃতি থেকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আমাদেরকে জাতিকে ফিরে আসতে হবে। স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি অর্থনীতি পরিচালনা করতে হবে। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতিবাজ আমলা জনপ্রতিনিধি তাদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। দুর্নীতির অর্থ রাষ্ট্রীয় খাতে জনগণের কল্যাণে ফিরিয়ে এনে ব্যয় করতে হবে। সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে দুর্র্নীতিমুক্ত রাখা চাই প্রত্যাশা জনগণের।
Google News ফিড অনসরণ করুন
