বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

৫ ঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
৫ ঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই যদি অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ে, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডবিস্নউইএফ) তাদের বার্ষিক বৈঠকের আগে বুধবার বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর সেই প্রতিবেদনে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ঝুঁকির সাধারণ ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সুনির্দিষ্ট ঝুঁকিগুলো উলেস্নখ করা হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে এমনটি উঠে এসেছে যে- পাঁচ ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

আমরা মনে করি, ঝুঁকির বিষয়টি আমলে নেওয়া এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ জ্বালানি স্বল্পতা। এ কারণে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়া অর্থনীতিতে ঝুঁকির অন্যান্য ক্ষেত্র হচ্ছে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া, সম্পদ ও আয়বৈষম্য এবং সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও বেকারত্ব।

আমরা মনে করি, যখন ঝুঁকির বিষয়গুলো সামনে আসছে তখন তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি, মহামারির পর চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে কম- বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এ কথা বলার পর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন দিল। সেখানে তারা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। মোট ৭১টি কোম্পানির ওপর জরিপ করে ঝুঁকির এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

লক্ষণীয়, সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেছেন, এই জরিপ ব্যবসায়ীদের ওপর করা হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে তাদের কাছে জ্বালানি সংকট এখন প্রধানতম ঝুঁকি। আর এটাও আলোচনায় এসেছে, শিল্পকারখানায় এখন চাহিদার ৬০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। গ্যাসনির্ভর যেসব শিল্প আছে, যেমন সিরামিক, ইস্পাত, টেক্সটাইল- এসব খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

আমরা মনে করি, উৎপাদন ব্যাহত হলে তা উদ্বেগজনক। এছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। সঙ্গত কারণেই দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি এবং বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে যে বিষয়গুলো উঠে আসছে তা বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।

বলা দরকার, মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত আলোচনাও সামনে এসেছে- যেখানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক উলেস্নখ করেছেন, এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব আছে। প্রত্যক্ষ প্রভাব হলো- মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জোরালো হয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। পরোক্ষ প্রভাব হলো- উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন। এছাড়া সম্পদ ও আয় উভয় ধরনের বৈষম্য, সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও বেকারত্ব সংক্রান্ত বিষয় আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পিছিয়ে থাকবে। কেননা, এ ক্ষেত্রে যে অর্থায়ন প্রয়োজন, সেই নিরিখে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে মাথাপিছু প্রায় ৪০০ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে ২৩০ ডলারের মতো বিনিয়োগ হতে পারে বলে মনে করছে ফোরামটি। যা আমলে নেওয়া জরুরি। সামগ্রিকভাবে ঝুঁকি সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো সামনে আসেছে তা আমলে নেওয়া এবং সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জরুরি। একইসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে