বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

মানব পাচার চক্র যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মানব পাচার চক্র যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশ গমনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ পথে বিদেশ গমনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে আবার অবৈধ বিদেশ গমনের সঙ্গে মানব পাচারকারী চক্র জড়িত। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রোমানিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসী পাচারে জড়িত ২১ জনকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির বর্ডার পুলিশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠী গঠন, অভিবাসী পাচার এবং জাল পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, প্রাথমিক তদন্তে ওঠে এসেছে আসামিরা রোমানিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, নেপাল, মিশর, তুরস্ক, বেলারুশ, ইতালি এবং অস্ট্রিয়ার নাগরিক। তারা বিভিন্ন স্তরে ভাগ হয়ে একটি অপরাধমূলক গোষ্ঠী গঠন করেছিলেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিবাসী পাচার।

আমরা বলতে চাই, যখন বাংলাদেশিদের নাম উঠে আসছে তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। সীমান্ত পুলিশ জানিয়েছে, আসামিরা ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ২৫০ জনেরও বেশি অভিবাসীকে রোমানিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। এসব কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন চক্রটির চার সদ্যসের একটি ছোট দল। এই চারজন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং অস্ট্রিয়ার নাগরিক। আমরা বলতে চাই, অবৈধ পথে বিদেশ গমন কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে নানা সময়ে অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ভয়াবহতা সামনে এসেছে।

এখন যেমন সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসী পাচারে জড়িত ২১ জনকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যার মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক আছে, তেমনি নানা সময়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে নিশ্চিত বিপদ জেনেও অবৈধ পথে বিদেশ গমনে উদ্যত হয় অনেকেই। সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেকেরই। মৃতু্যর চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেকে সাগরে ডুবেও মারা যাচ্ছেন, আর যারা ভাগ্যগুণে বেঁচে যান, তাদের ঠাঁই হয় জেলের অন্ধকার খুপড়িতে এমন তথ্যও নানা সময়ে উঠে এসেছে। এখন যখন আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক আছেন, তখন এই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। দালালদের খপ্পরে পড়ে যেন কেউ সর্বস্বান্ত না হয় সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্মর্তব্য যে, অভাবের তাড়নায় কিংবা পরিবারে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে, উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার হচ্ছে এমন বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। বিশেষ করে দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক মানুষ। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সাগরপথে পাড়ি দেওয়া বা অবৈধ পথে নিয়ে যাওয়ার নামে মানব পাচারের ঘটনা রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আগে বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের ঘটনাতেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এই উৎকণ্ঠাজনক অবস্থা পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা জরুরি।

আমলে নেওয়া দরকার, জানা যাচ্ছে এবারের অভিযানে আটককৃতরা রাজধানী বুখারেস্ট ও সীমান্তবর্তী তিমিসোয়ারা অঞ্চল থেকে অনিয়মিত অভিবাসীদের গ্রাহক হিসেবে খুঁজে নেয়। সীমান্ত পার করানোর আগে চক্রটি অভিবাসীদের রোমানিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে রাখত। রোমানিয়ার পশ্চিম সীমান্তের স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ট্রেনের মালবাহী বগিতে লুকিয়েও তারা কিছু অভিবাসীকে পাচার করেছে।

সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার ভয়াবহতা আমলে নিতে হবে। মানুষকে সচেতনতা করতে হবে। দালালদের খপ্পরে যেন সাধারণ মানুষ না পড়ে, সেটা যেমন আমলে নিতে হবে তেমনি এবারের ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। ফলে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নিতে হবে। অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ভয়াবহতা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে