মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণা

সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রতারণা

প্রতারণা হচ্ছে- স্বচ্ছ পথে অগ্রসর না হয়ে বাঁকা পথে কোনো কিছু অর্জনের চেষ্টা। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা এমন যে, মানুষ খুব সহজেই একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। প্রতারণার মাত্রা এখন এতটাই প্রবল যে, এটা বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য। এর ফলে, মানুষ যেমন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে, একইভাবে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিনে দিনে বৈষম্য ও অস্থিরতা বাড়ছে।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।' একুশ শতকের প্রতারণাপূর্ণ সমাজে বাস করলে তিনি কী বলতেন। হয়ত-বা বলতেন, 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখা পাপ।' প্রশ্ন হচ্ছে আমরা নিজেদের এই অধঃপতনের জায়গায় কীভাবে নিয়ে এলাম। এটা একদিনে গড়ে ওঠেনি। কথায় বলে দুর্জনের ছলের অভাব নেই। পোশাকের বাহার, কথার বাহার, ক্ষমতা ও টাকার জাদু এবং নানানরকম প্রলোভন সামনে এনে মানুষকে মোহগ্রস্ত করে ফেলে প্রতারকরা। এরা বিভিন্ন নামে ও পেশায় তাদের পরিচয় দেয়। প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে, সমাজের প্রভাবশালী ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা এটাও প্রমাণ করতে চায় এবং মানুষকে বিশ্বাসও করায়। এরা এলাকায় দাতা ও জনদরদি হিসেবে পরিচিত এবং সমাদৃত। এর শিকার হয় দেশের অসহায় মানুষ। প্রতারকদের পালস্নায় পড়ে এ দেশের অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

গাইবান্ধা সদর থানা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৩০) কাজ করেন স্থানীয় একটি প্রিন্টিং প্রেসে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও দক্ষতার কারণে এলাকায় পরিচিত ফেসবুক মাস্টার নামে। দিনে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলেও রাতভর বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, নায়ক, সরকারি চাকরিজীবীদের নাম-ছবি ব্যবহার করে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চালাতেন প্রতারণা। আনোয়ারের প্রতারণার প্রধান টার্গেট ছিল মেয়েরা। শুধু ঢাকার তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের নামে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চ্যাট করেছেন ৭৭১ নারীর সঙ্গে। বিষয়টি টের পেয়ে নিজে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওসি মহসীন। পরে অবস্থান শনাক্ত করে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) গাইবান্ধা থেকে আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

মনে রাখতে হবে চারদিকে প্রতারণার ফাঁদ। প্রতারক সমাজে একজন নয়, অসংখ্য। এরা নানা ধরনের মুখোশ পরে কেউ আড়ালে আবডালে আবার কেউ প্রকাশ্যে প্রতারণা করছে। মানুষকে শোষণ নির্যাতন করে নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে এরা অর্থবিত্তের মালিক হয়ে ক্ষমতার নগ্ন দাপট দেখাচ্ছে। দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে। আবার পতনও হচ্ছে সেভাবে। দেশের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এরা লালিত ও বিকশিত হয়। এরা ধরা পড়লেও এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতারা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

মানুষ দুটো কারণে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কেউ পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে আবার কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি তাকে ধনী ও ক্ষমতাবান হতে হবে, এই স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে, বিভোর করে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তি নিষ্ঠুরতা অমানবিক ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এর পরিণতি কী হতে পারে ভেবেও দেখে না। কেউ অফিস খুলে চাকরি দেওয়ার নামে, কেউ বিদেশে পাঠানোর নামে, কেউ অনলাইনে পণ্য কেনার নামে, কেউ বা হায় হায় কোম্পানি খুলে কোটি কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অবলীলায়। এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। দ্রম্নত সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে