সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ শে ফেব্রম্নয়ারি :পূর্বাপর

বর্তমানে শহীদ দিবস উদযাপনে আড়ম্বরতা আছে, আছে জৌলুস। নেই প্রাণ, আন্তরিকতা। ফেব্রম্নয়ারি মাসে কোনো কোনো কর্মকর্তা দু'চার লাইন বাংলা লিখে সংবাদের শিরোনাম হন। আমার জানামতে সংবিধান অনুযায়ী এ কাজগুলো মাতৃভাষাতেই সম্পন্ন করার কথা।
নূরুর রহমান খান
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

শাস্ত্র কিংবা রাষ্ট্রশাসনের বাহন না হওয়ায় স্বভূমেই বাংলা ভাষা ছিল অনাদৃত, অবহেলিত। পর্যায়ক্রমে সংস্কৃত, ফারসি, ইংরেজি ও উর্দু হিন্দির নিষ্পেষণ - এর স্বাভাবিক বিকাশ ও পুষ্টির ক্ষেত্রে ছিল প্রাণান্তকর অন্তরায়। অন্ধ ধর্মীয় আবেগ ও অন্তঃসারশূন্য আভিজাত্যের মোহ যেমন বাঙালি মুসলমানকে মাতৃভাষা সম্পর্কে করেছিল দোদুল্যচিত্ত, তেমনি শাস্ত্রাচারী সমাজপতির মোহিতমোচন বাঙালি হিন্দুকেও তার মুখের ভাষায় শাস্ত্রচর্চা থেকে রেখেছে বিরত। সাধারণ বাঙালি আপন ভাষার শুধু ধর্মকথা এবং লৌকিক দেবতার মাহাত্ম্য-গাথা রচনা ও প্রচারের অধিকার পেয়েছিল। মধ্যযুগের গুণরাজ খান উপাধিক কবি মালাধর বসুকেও বলতে হয়েছে, 'পুরাণ পড়িতে নাহি শূদ্রের অধিকার। পাঁচালি পড়িয়া তর এ ভব সংসার' বাংলা ভাষা চর্চা শুধু ব্রাহ্মণ সমাজেরই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি, মুসলমান সমাজও ছিল ধর্মশাস্ত্রগ্রন্থের বাংলা তর্জমার ঘোরবিরোধী। কারণ দেশজ বুলি তাদের বিবেচনায় 'হিন্দুয়ানী ভাষা।' এ প্রতিরোধ লঙ্ঘন করে দুঃসাহসী কবিরা তাদের প্রতিভা ও মাতৃভাষাপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। সমাজ-শাসন এবং ধর্মের কাল্পনিক ভীতি ও দীর্ঘদিনের আচার-ঐতিহ্য ভঙ্গের জন্য জবাবদিহি করেছেন। তন্মধ্যে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও ধ্বনিত। পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের কৈফিয়ত :

'না লেখে কিতাব কথা মনে ভয় পাত্র।

দোষীব সকল তাক ইহ ন জুয়ায়।।

গুনিয়া দেখিনুঁ আক্ষি ইহ ভয় মিছা।

না হয় ভাষায় কিছু হয় কথা সাচা।।'

কিন্তু কূপমান্ডূক্যের হাত থেকে নিষ্কৃতি মেলেনি। লিখেছেন-

(দেশি ভাষায়) 'পাঞ্চালি রচিলুঁ করি আছেত দূষিতে।।

মুনাফিক বোলে মোরে কিতাবেতে পড়ি।

কিতাবের কথা দিলুঁ হিন্দুয়ানি করি।।

দেশি ভাষায় কাব্যচর্চার বিরুদ্ধে ফতোয়াদানকারীদের উদ্দেশে কবির মোক্ষম জবাব:

"আলস্নায় বনিছে, 'মুই যে দেশে যে ভাষ।

সে দেশে সে-ভাষে কইলুম রসুল প্রকাশ।।

সুতরাং, মাতৃভাষা অবজ্ঞেয় কোন সুবাদে? ধর্মধ্বজিরা কবিকে 'মুনাফিক' অর্থাৎ' 'ভন্ড' বা 'ধর্মধ্বংসকারী' আখ্যা দিলেও প্রায় চার শতাধিক বৎসর পূর্বে সত্যালোকে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন-

'যারে সেই ভাষা প্রভু করিল সৃজন।

সেই ভাষা হয় তার অমূল্য রতন।।'

এ দেশের নগণ্যসংখ্যক বহিরাগত মুসলমানের অনুকরণে 'দেশজরা'ও তথাকথিত আশরাফ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন এবং এরাই ছিলেন বঙ্গীয় মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি। তারা নিজেদের 'বাঙালি' পরিচয়ে ছিলেন দ্বিধান্বিত ও শঙ্কিতচিত্ত। ফলে এ সমাজে বাংলা ভাষাও হলো অপাংক্তেয়। তাদের হীনম্মন্য মানসিকতার ফসল বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে প্রকাশিত মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদের 'হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা' (১৯২৭) গ্রন্থের ভূমিকা। তার অভিমত; 'উর্দুভাষা না থাকিলে আজ ভারতের মোসলমানগণ জাতীয় ভাবহীন ও কিরূপ দুর্দশাগ্রস্ত হইত, তাহা চিন্তা করিবার বিষয়। বাংালাদেশের মুসলমানদের মাতৃভাষা বাংলা হওয়াতে বঙ্গীয় মোসলমান জাতির সর্বনাশ হইয়াছে।' জানুয়ারি ১৯৩০-এ 'ইসলাম প্রচারক'- সম্পাদকের স্বধর্মীর উদ্দেশে হুঁশিয়ারি- 'আরবি, ফারসি, ইর্দু ভাষার আলোচনা এ দেশ হইতে উঠিয়া গেলে, আমরা জাতীয়ত্ব হারাইয়া সম্পূর্ণ হিন্দু হইয়া পড়িব, তাহা হইলে কালে বৌদ্ধদের ন্যায় আমাদের অস্তিত্ব হিন্দুদের মধ্যে বিলীন হইয়া যাইবে।'

বাঙালি মুসলমানের ভাষার উত্তরাধিকার এবং 'বাঙালিত্বে'র জাত-বিচারের হৈ-হুলেস্নাড়ে আলোড়িত কর্দমাক্ত জলরাশি স্থিত হলে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে বাস্তবানুগ ও স্বচ্ছ হয়ে আসে। আধুনিক শিক্ষা, যুগানুগ হাওয়া তাদের' আধিমুক্তির সহায়ক হলো। মুক্তদৃষ্টিতে নিজেদের জাতীয়তা, মাতৃভাষা, ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে সুস্থ চিন্তাভাবনায় তারা পথের সন্ধান করলেন। তারা যুগপৎ ধর্মান্ধতা ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে প্রচার ও নিরলস সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হন। সংস্কারমুক্ত উদার চিন্তাধারা ও কর্তব্যবোধই ছিল তাদের পথ প্রদর্শক। তাদের ভূমিকা অকৃত্রিম দেশপ্রেম ও মাতৃভাষাপ্রীতির অতু্যজ্জ্বল নিদর্শন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে তাদের সুস্থ-সবল চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত।

১৩১৬-তে 'বাসনা' পত্রিকায় হামেদ আলী লিখেছেন : 'মাতৃগর্ভ হইতে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রথম যে ভাষা আমাদের কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইয়াছে, যে ভাষা আমরা আজীবন ব্যবহার করি, যে ভাষায় আমরা সুখ-দুঃখ, হর্ষ বিষাদ প্রকাশ করি, যে ভাষায় হাটেবাজারে, ব্যবসায়বাণিজ্যে এবং বৈষয়িক কার্যে কথোপকথন করি- যে ভাষায় নিদ্রাকালে স্বপ্ন দেখি- সেই ভাষা বাংলা। সুতরা, বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা।' ১২৯৭ সালে 'হিতকরী' পত্রিকায় মীর মশাররফ হোসেন লিখেছেন, 'বঙ্গবাসী মুসলমানদের দেশভাষা বা মাতৃভাষা 'বাংলা'। মাতৃভাষায় যাহার অবস্থা নেই, সে মানুষ নহে।' ১৩২৪ সালে কোলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মিলনীর দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে মুহম্মদ শহীদুলস্নাহর বক্তব্যের অংশবিশেষ- 'মাতৃভাষার উন্নতি ব্যতীত কোনো জাতি কখনো কি বড় হইতে পারিয়াছে? আরব পারস্যকে জয় করিয়াছিল। পারস্য আরবের ধর্মের কাছে মাথা নিচু করিয়াছিল, কিন্তু আরবের ভাষা নেয়নি; শুধু লইয়াছিল তাহার ধর্মভাব আর কতকগুলো শব্দ।' এ আন্দোলনে মুসলিম মহিলারাও পশ্চাদপদ ছিলেন না। ১৯২৯-এ 'সওগাত' পত্রিকায় নূরুন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী লিখেছেন-" 'বাঙালি' শব্দের ওপর আমাদের প্রতিবেশী হিন্দুর যে পরিমাণ অধিকার, তার চেয়ে আমাদের দাবি অনেকাংশে বেশি... ভারতের অর্ধেক সংখ্যক মুসলমান আমরা এই বাংলা মায়েরই সন্তান। ... পুরুষানুক্রমে ... বাঙ্গালা দেশের গন্ডির মধ্যে বাস করে, আর এই বাংলা ভাষাতেই সর্বক্ষণ মনের ভাব ব্যক্ত করেও যদি বাঙালি না হয়ে আমরা অপর কোনো একটা জাতি সেজে বেঁচে থাকতে চাই, তাহলে আমাদের তো কখনো উত্থান নাই-ই, অধিকন্তু চিরতমসাচ্ছন্ন গহ্বর মধ্যে পতনই অবশ্যম্ভাবী।'

এ সময় এক শ্রেণির ধর্মান্ধ ফেরেব্‌বাজ বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা, মাতৃভূমির সঙ্গে তাদের জাতিসত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। মুক্তমনা সুধীজন বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করেছেন। ১৩২৯ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতে ঐক্যের দোহাই দিয়ে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে তার সৃষ্ট চরিত্র 'পান্ডক্তজী'র ভাষ্যে উপস্থাপন করেছেন : 'পাঁচ সাত জন বড় বড় স্বদেশী পন্ডিত মিলে নাকি আবিষ্কার করেছেন যে, বাঙালির ছেলেদের পেটে জাতীয়তা ঢোকাতে গেলে আগে তাদের শেখাতে হবে হিন্দুস্থানি। বাংলা বরং না শিখলেও চলতে পারে, কিন্তু হিন্দুস্থানি শেখা চাই-ই চাই। ... কিন্তু আমি- আমি বাঙালি, আমার চৌদ্দপুরুষ বাঙালি। আমার রক্ত, হাড় বাংলার মাটি থেকে গড়া, বাঙালির ভাবনাচিন্তা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা আমার মনের পর্দায় জড়ানো। আমি তোমাদের শখের একতার খাতিরে তো নিজেকে তুলোধোনা করে উড়িয়ে দিতে পারিনে। তোমরা যাকে একতা বলছ, সেটা এক হয়ে বেঁচে থাকা নয়, সেটা হচ্ছে এক শ্মশানে গিয়ে মরা। সেটা মুক্তি নয়, নয়।' দেশভাগের পর আসামে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য আন্দোলনকারীদের সমর্থন করে ১৯৬২-তে সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন, 'যে সভ্যতা-সংস্কৃতি সে তার পিতা-পিতামহের কাছ থেকে পেয়েছে যার কল্যাণে সে সভ্যজন বলে পৃথিবীতে স্বীকৃত হচ্ছে, যাকে সে পরিপুষ্ট করে পিতৃপুরুষের কাছ থেকে ঋণ মুক্ত হতে চায়- সে তার মাতৃভাষা।'

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ যুগের অবসান হলেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশ পাকিস্তান সরকারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ল। ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্প, চাকরি, দেশরক্ষা বাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রেই পূর্ব পাকিস্তান ছিল বঞ্চনার শিকার। সবশেষে বাঙালির মাতৃভাষাকেও উচ্ছেদের ব্যবস্থা করল। এমন কি আরবি হরফে বাংলা লেখার উদ্যোগ নিয়ে চিরতরে বাঙালির মাতৃভাষাকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় মেতে উঠল। সমস্ত বঞ্চনা অপমানের বিরুদ্ধে বাঙালি রুখে দাঁড়ানো, প্রতিরোধ গড়ে তুললো। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ ১৯৪৮-এর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে বাঙালির স্বাতন্ত্রের পরিচয় তুলে ধরেছেন- 'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জোটি নেই।' 'নির্বাসিতের আত্মকথা'য় উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তার তুলনা কোথায়?-"(জেলখানায়) আমরা হিন্দু-মুসলমান সবার হাত হইতে নির্বিচারে রুটি খাই দেখিয়া মুসলমানরা প্রথম প্রথম আমাদের পরকালের সদ্গতির আশায় উন্নসিত হইয়া উঠিয়াছিল, হিন্দুরা কিঞ্চিৎ ক্ষুণ্ন হইয়াছিল; শেষে বেগতিক দেখিয়া উভয় দলই স্থির করিল সে, আমরা হিন্দু নই মুসলমানও নই- আমরা বাঙাীল।'

বাঙালিদের অপমান ও বঞ্চনার পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ভাষাকে কেন্দ্র করে বিস্ফোরিত হয়। দেশ বিভাগের পর সিলেট, বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি ওঠে। এই দাবি প্রবলতর হয়ে ছাত্রসমাজে প্রধানত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। পরের ইতিহাস এখন আর অজানা নয়। ছাত্র নেতৃত্বেই এই দাবি বেগবান হয়। তখনকার রাজনীতিবিদদের এই আন্দোলনের সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। আন্দোলনকারী এই ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকেই পরবর্তী সময়ে জাতীয় নেতাদের উদ্ভব ঘটে। শেখ মুজিব হলেন বাংলাদেশের স্থপতি 'বঙ্গবন্ধু'। অন্যতম ছাত্রনেতা তাজউদ্দীন আহমদ হলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী।

প্রতি বছর ২১ ফেব্রম্নয়ারি তারিখে আমরা ভাষা-শহীদদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। তাদের পবিত্র রক্ত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার সোপান-অভু্যদয় ঘটেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। এই দিনটি পালন করতে গিয়ে আমরা আবেগাপস্নুত হয়ে পড়ি। বছর ষাটেক আগে একুশে ফেব্রম্নয়ারির সকালে আমরা নগ্নপদে প্রভাবফেরিতে যেতাম। সেটা ছিল মৌন মিছিল। শহীদ মিনার হয়ে শহীদদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে ফিরে আসতাম। সব পাল্টেছে। যুগের হাওয়া আমাদের বিষণ্ন, কখনো ক্রোধান্বিত করে। এখন ২১ শের সূচনা হয় ২০ তারিখ দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ ১২টা ১ মিনিটে। চোমরাও খাব হোমরা ও বাহাদুররা মর্যাদানুসারে একের পর এক আসেন। সদম্ভ শ্রদ্ধা ঝেড়ে প্রত্যাবর্তন করেন। শহীদ জননী কিংবা স্বজনদের আর ভিড়ের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের অধিকাংশই এখন না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

বর্তমানে শহীদ দিবস উদযাপনে আড়ম্বরতা আছে, আছে জৌলুস। নেই প্রাণ, আন্তরিকতা।

ফেব্রম্নয়ারি মাসে কোনো কোনো কর্মকর্তা দু'চার লাইন বাংলা লিখে সংবাদের শিরোনাম হন। আমার জানামতে সংবিধান অনুযায়ী এ কাজগুলো মাতৃভাষাতেই সম্পন্ন করার কথা। ১৯৪৭ সালে কাজী মোতাহার হোসেন লিখেছেন- 'পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সরকারি চাকরি করতে হলে প্রত্যেককে বাংলা ভাষায় মাধ্যমিক মান পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষানবিশ সময়ের পরে অযোগ্য এবং জনসাধারণের সহিত সহানুভূতিহীন বলে এরূপ কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হবে।' তাহলে এখন যারা বাংলা জানেন না বলে অহংবোধ করেন, তাদের কী করা উচিত? ষাটের দশকে সন্তান-সন্ততি এবং বাড়ির অর্থপূর্ণ শ্রম্নতিমধুর বাংলা নামকরণ করে শিক্ষিত জন শ্লাঘা বোধ করতেন। আমন্ত্রণপত্র বাংলায় লিখে মার্জিত রুচির পরিচয় দান করতেন। এখন সেসব পুরনো দিনের কথা।

আমাদের মতো কিছু নির্বোধ এখনো অতীতের স্মৃতিচারণ করে। হারিয়ে যেতে চায় পুরনো দিনে।

ড. নূরুর রহমান খান : সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে