সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের অগ্রযাত্রায় গণমাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে

সব সময় দেশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সুশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের অদম্য যাত্রা অব্যাহত রাখছে মিডিয়া। ভবিষ্যতেও এই অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যাবে, মিডিয়ার কাছে এটাই সবার প্রত্যাশা।
হীরেন পন্ডিত
  ২৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে জনগণের সামনে তুলে ধরে উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বেগবান করতে কাজ করছে গণমাধ্যম। সেই সঙ্গে গণমাধ্যম নজরদারি বা ওয়াচডগ'র ভূমিকা পালন করছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে গণমাধ্যমের ঐতিহাসিক অবদান- যা বহির্বিশ্বের জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভু্যত্থান এবং সত্তরের নির্বাচন প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনার পেছনের অসামান্য অবদান রয়েছে গণমাধ্যমের।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেখানে কোনো রাষ্ট্রের গণমাধ্যম সে রাষ্ট্র কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ অথবা যে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে। সাংবিধানিকভাবেই বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি সাংবিধানিক অধিকার। জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, 'প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। এই অধিকারে হস্তক্ষেপ ছাড়াই মতামত রাখা এবং কোনো গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য ও ধারণা অনুসন্ধান করা স্বাধীনতার সীমানা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।' আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের-২ এর ধারায় উলেস্নখ আছে, 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হইল', অর্থাৎ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জায়গা যথেষ্ট পাকাপোক্ত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের ধারার ৩৯(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে এবং ৩৯(২) সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। আলোচনা, মত প্রকাশ, ঐক্য হলো গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি। যেখানে গণমাধ্যম যত বেশি শক্তিশালী সেখানে গণতন্ত্র ততো বেশি শক্তিশালী। গণমাধ্যমের সঠিক চর্চা যেমন গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে, তেমনি গণতন্ত্র পারে গণমাধ্যমকে স্বাধীন রাখতে। স্বাধীন গণমাধ্যম যে কোনো সরকারের সেরা বন্ধু। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচক হিসেবে ধরা হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানে উলেস্নখ করা রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতির মধ্যে একটি হলো গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সব ক্ষমতার অধিকারী। জনসাধারণের প্রতিক্রিয়াই নির্ধারণ করে দেশটি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। অর্থাৎ গণতন্ত্র হলো জনসাধারণের শাসন ব্যবস্থা। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করাই গণতন্ত্র। ফলে গণতন্ত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ ও স্বাধীনতা থাকে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অপরিহার্য।

গণতন্ত্রের পাশাপাশি সুশাসন ও উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মুক্ত গণমাধ্যমের চর্চাকে পাশকাটিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতি কল্পনা করা সম্ভব নয়। তবে হার্বার্ট স্পেন্সারের কথা মনে রাখতে হবে তার মানে দাঁড়ালো অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের ইচ্ছামত চলাই কিন্তু স্বাধীনতা। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া। গণমাধ্যমের সুষ্ঠু চর্চা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের সহায়ক হতে পারে। আধুনিক যুগে গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সমাজের ন্যায়-অন্যায়, অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার, নাগরিকদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, অধিকার, কর্তব্য, জনমত গঠন ও ভালো-মন্দের প্রতিফলন ঘটে গণমাধ্যমের কল্যাণে। একটি জাতির উন্নয়নের পথের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো গণমাধ্যম। একজন বিবেকবান এবং সচেতন সংবাদকর্মী একটি জাতির জন্য অন্যতম পথপ্রদর্শক, যার সঙ্গে সহায়ক ভূমিকা পালন করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম। অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কিংবা জনপদের সমস্যা, প্রতিকার এবং সম্ভাবনা লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা, অনগ্রসর ও অসচেতন জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো, তাদের জনশক্তিতে পরিণত করা, নতুন নতুন, চিন্তা, ধারণা, উদ্ভাবনী শক্তির প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে জাতিকে আলোর পথ দেখানোর সহায়ক ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম। তাই একটি দেশের গণমাধ্যমকে পাশকাটিয়ে উন্নতির চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।

উন্নয়ন হচ্ছে মানব উন্নয়ন, মানুষের অবস্থা ও জীবনমানের উন্নয়নের একটি সামগ্রিক অবস্থা। আবার শুধু আয়ের ব্যবস্থাকে উন্নয়ন বলা যায় না বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা উন্নয়নের অন্যতম মানদন্ড। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রয়োজন আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, উদারনৈতিক গণতন্ত্র, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ চর্চার মাধ্যমে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং তা বাস্তবায়নের পেছনে অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম। গণমাধ্যম স্বাধীন হলে বাকস্বাধীনতা থাকে- যার ফলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এবং গণতন্ত্রের চর্চা বহাল থাকে। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় জাতি-ধর্ম-দলনির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।

১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মে মাসের ৩ তারিখকে 'বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই দিনে মুক্ত গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা উদযাপনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার অঙ্গীকার এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।

মুক্ত এবং স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মাধ্যমে নাগরিকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য জানার পাশাপাশি তাদের নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে। স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার দলিলের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার মূল্যবোধকে সম্মিলিতভাবে সমুন্নত রাখি। সাংবাদিকদের অবশ্যই হয়রানি, ভীতি বা সহিংসতার ভয় ছাড়াই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এটি সুশাসনকে সহায়তা করা ও জনসাধারণকে কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবহিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে এবং তথ্যের সূত্রগুলোর সুরক্ষা দিতে পারতে হবে।

সরকার, গণমাধ্যমের সংস্থাগুলোর স্বত্বাধিকারী, নাগরিক সমাজের নেতারা, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই সব কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার মাধ্যমে একটি সমাজ আরো বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধশালী হতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি এমন দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বেশি। এর সহজ কারণটি হলো- মুক্ত গণমাধ্যম, স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা- যা দুর্নীতি কমায় ও উদ্ভাবনীশক্তিকে ত্বরান্বিত করে- যা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য সহায়ক।

এছাড়াও মুক্ত গণমাধ্যম, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্যও অত্যাবশ্যক। সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রকাশ ও জবাবদিহিতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এটিমুক্ত গণমাধ্যম আছে এমন সব দেশের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়াও সাংবাদিকরা নারীদের বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টিও তুলে ধরেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্মুক্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাজের বিকাশ ও উন্নয়নের শক্তিশালী ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

কোনো রাষ্ট্র যদি নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করে, তবে সেখানে গণমাধ্যমের একশত ভাগ স্বাধীনতা থাকতেই হবে। যে গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করবে, সেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবার সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণের কথাই উঠে আসে গণমাধ্যমে। তাই এই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলে গণতন্ত্র সমন্বিত রাখা সম্ভব।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা করতে হলে গণমাধ্যমের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা চাই। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো, তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, সম্পদের অপব্যবহার, নাগরিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা প্রকাশে গণমাধ্যম প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ এবং এটি অন্যতম দায়িত্বও বটে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র একটি অপরটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অচল হয়ে পড়ে। কারণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়; আর জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই হলো গণতন্ত্রের মূল। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনের কারণ তুলে ধরে স্থিতিশীলতা আনয়ন, বাধাহীন তদন্ত ও গবেষণা নিশ্চিত করে।

গণমাধ্যম মানুষের জন্য তথ্যের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করে। তবে অনেক সময় গণমাধ্যমকেও পক্ষপাতিত্ব করতে দেখা যায়। নানা মতাদর্শের ভিন্ন আঙ্গিকের সংবাদ জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে গণমাধ্যম অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে। আবার অনেক সময় গণমাধ্যম চাইলেও সঠিক ও মুক্তচিন্তার প্রকাশ ঘটাতে পারে না। আমাদের এই দেশে অতীতে তেমন ইতিহাসও আছে। ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনসাধারণ সরাসরি মত প্রকাশ করতে পারছেন। এখন আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা শুধু সংবাদপত্রের ওপরই নির্ভর করে না। এতে যুক্ত হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ও বস্নগ। তবে এসব মাধ্যমের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায় অনেক সময় ভুল সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা হয়, এর ফলে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়। মালিক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রভাবও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গণমাধ্যমের কাজ হলো এই জনগণের বার্তা নিরপেক্ষ ও নির্ভুলভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরা। একটি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে কি নেই এবং নাগরিকের চিন্তার স্বাধীনতা আছে কি নেই, তা দিয়ে সহজেই গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি পরিমাপ করা সম্ভব। গণমাধ্যমের সমন্বয়হীনতা রোধ করা জরুরি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অর্জনের পেছনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং এখনো রাখছে। দেশ, জাতি, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের বিষয়টি বরাবরই সমুন্নত ইন্টারনেটের কল্যাণে মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি অনলাইন সংবাদমাধ্যমসহ ব্যক্তি পর্যায়ে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বড় ধরনের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিপস্নব ঘটিয়েছে বলা যায়। জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে প্রান্তিক মানুষের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের দাবি আদায়ে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।

সব সময় দেশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সুশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের অদম্য যাত্রা অব্যাহত রাখছে মিডিয়া। ভবিষ্যতেও এই অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যাবে, মিডিয়ার কাছে এটাই সবার প্রত্যাশা।

হীরেন পন্ডিত :প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে