সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুপেয় পানির সংকট কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

নতুনধারা
  ২৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

পানির অপর নাম জীবন। সঙ্গত কারণেই যদি নিরাপদ পানির সংকট সৃষ্টি হয়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। যা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। মনে রাখা জরুরি, জীবনের অধিকার মানে পানির অধিকার। পানি থাকলেই জীবন থাকবে। পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। উদ্বেগের বিষয় হলো, পানির দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে সুপেয় পানি পাচ্ছে না ৩ কোটির বেশি মানুষ- এমনই খবরে উঠে এসেছে। অথচ বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ পানির সংকটে পড়েছে দেশ। বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানির অভাব ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবে দ্রম্নত ফুরিয়ে যাচ্ছে সুপেয় পানি। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, দেশের অনেক এলাকায় সুপেয় খাবার পানি এখন দুষ্প্রাপ্য।

আমরা মনে করি, সুপেয় পানির অভাব ক্রমে প্রকট হচ্ছে এটাকে এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। লক্ষনীয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র পানি সংকট। দেশেও সুপেয় পানির জন্য চলছে হাহাকার। এর আগে এটাও আলোচনায় এসেছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলে সুপেয় পানি যেন সোনার হরিণ! সম্প্রতি প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, উপকূলের চারপাশে পানিতে টইটম্বুর থাকলেও খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। মিষ্টি পানির সব আধার লবণাক্ততায় ভরে যাচ্ছে। লবণ পানির আগ্রাসনে পড়েছেন উপকূলের মানুষ। উপকূলের নারীদের এক কলসি পানির জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে দীর্ঘপথ। পানি না পেয়ে এলাকা ছাড়ছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ এমনটিও জানা যাচ্ছে। যা আমলে নেওয়া অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।

উলেস্নখ্য, দেশের দক্ষিণের খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। উপকূলের মানুষকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এক কলসি পানি কিনে আনতে হয়। উপকূলীয় এলাকায় এক কলসি পানির দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা। নারীদের পানির সন্ধানে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘপথ। বিশুদ্ধতা যাচাই-বাছাই তো দূরের কথা, কোনো মতে খাওয়া যায়- এমন খাবার পানি জোগাড় করতেই উপকূলের নারীদের দিন কেটে যায়। ইউনিসেফের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নদী ও পানির দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে সুপেয় পানি পাচ্ছেন না প্রায় ৩ কোটি মানুষ। এছাড়া পাকিস্তানে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ, চীনের ১০ কোটি ৮০ লাখ মানুষ, ভারতের ৯ কোটি ৯০ লাখ ও নাইজেরিয়ার ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত বলেও জানা যাচ্ছে।

বলা দরকার, যখন পানির জন্য এমন হাহাকার- তখন এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে গতকাল পালিত হলো 'বিশ্ব পানি দিবস'। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য 'শান্তির জন্য পানি'। আমরা বলতে চাই, যখন দেশে মাত্র ৫৬ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না এবং বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রায় পাঁচ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে সুপেয় পানির অভাবে- তখন এ সমস্যাকে এড়ানোর সুযোগ নেই। দেশের উপকূল, পার্বত্য এলাকা, হাওড়াঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, চা বাগান ও দুর্গম এলাকায় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। অগ্রগতির ধারায় সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। ফলে এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ পানিও নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি মানুষ জীবন হারাচ্ছে বিশুদ্ধ পানির অভাবে। পানিবাহিত রোগের প্রভাবে মৃতু্যর সংখ্যা এখনো বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে প্রতিদিন মৃতু্যবরণ করছে মানুষ। ফলে সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে সচেতন হতে হবে সবাইকে। মনে রাখতে হবে, নিরাপদ পানি ছাড়া পৃথিবী প্রাণহীন। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নিরাপদ পানির বিষয়টিকে সামনে রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে