সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে
  ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ডেঙ্গু পরিস্থিতি

দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক- এই আলোচনা বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ আর কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে এমন আলোচনাও নতুন নয়। ফলে, সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃতু্য হয়েছে। একই সময়ে এক হাজার ২০৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৬০ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২২৭ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৫১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৫৫ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭১ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৬ জন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) চারজন রয়েছেন।

বলা দরকার, সম্প্রতি এমন খবর সামনে এসেছে যে, দেশে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। অন্যদিকে, মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে, ডেঙ্গুসংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। আক্রান্ত ও মৃতু্য- এসব তথ্য আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। স্মর্তব্য, এডিস মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এছাড়া, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি পায়, সেখানে যেমন ধ্বংস করা দরকার, এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এর আগে এমন আলোচনা উঠে এসেছে- বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা দেখভাল ভালোভাবে হয় না। এতে বিভিন্ন জায়গায় এডিসের ঘনত্ব দেখা দেয়। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেহেতু এডিস মশা সংক্রমিত মশা। এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই সংশ্লিষ্টদের সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এটাও উলেস্নখ্য, ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। আর ওই বছর আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন। স্মর্তব্য, গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এ রোগে মারা যান- যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃতু্য। অন্যদিকে, এর আগে, ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃতু্য হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃতু্য হয়েছিল। ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত এ রোগে ২৮১ জন মারা যান।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিন। পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া, ডেঙ্গু রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নেরও কোনো বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেভাবে ডেঙ্গু আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে