সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

গ্যাস সংকট বাড়ছে

সঠিক উদ্যোগ নিন
  ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গ্যাস সংকট বাড়ছে

যতই দিন যাচ্ছে দেশে গ্যাস সংকট ততই বাড়ছে। দেশে জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে দ্রম্নত গতিতে, বিদু্যৎ ও শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা তৈরি হয়েছে, এমন অবস্থায়ও গতানুগতিক ধারায় কাজ করছে পেট্রোবাংলা। অনেকটা লোক দেখানো পরিকল্পনা আর দফায় দফায় বৈঠকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে কার্যক্রম। ২০১৫ সালে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের জোগান ছিল প্রায় ২৭শ' মিলিয়ন ঘনফুট। গত ৯ বছরে তা কমতে কমতে গড়ে দুই হাজার থেকে ২২শ' মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। এখন প্রায় ৯০০শ' মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখা হয়েছে। আমদানি করা এলএনজির জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। দেশীয় উৎসে গ্যাসের অনুসন্ধানে ধীরগতি, সমুদ্রে গ্যাসের অনুসন্ধানে খামখেয়ালি এবং এলএনজি আমদানিতে বেশি উৎসাহের কারণে গ্যাসের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ব্যাপক ফারাক তৈরি হয়েছে। ক্রমান্বয়ে স্থবির হয়ে পড়ছে শিল্প-বাণিজ্য, বিদু্যৎ উৎপাদন। গতি কমছে অর্থনীতির চাকার।

\হপেট্রোবাংলা সূত্রে প্রকাশ, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে অন্তত ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তবে পেট্রোবাংলা বলছে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে ২৭শ' মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া গ্যাসের উৎপাদন, সরবরাহ এবং রাজস্ব আদায়ের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক ফারাক। এখনো গ্যাস উৎপাদন, আমদানি এবং গ্রাহকের কাছে বিক্রির প্রক্রিয়াকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে পারেনি পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানিগুলো। সিস্টেম লসের নামে শিল্পকারখানায় অব্যাহত গ্যাস চুরির ঘটনা ঘটছে। এই চুরি বন্ধ করা যায়নি।

সারা বছর বিতরণ কোম্পানিগুলো অভিযান চালাচ্ছে, তবু ক্রমবর্ধমান হারে শিল্পকারখানায় গ্যাসের অপব্যবহার হচ্ছে। আবাসিক খাতেও গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে নানা ধরনের পরিকল্পা করেছে পেট্রোবাংলা। যার মধ্যে অন্তত ১০০ নতুন কূপ খননের বিষয় রয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনার যৎসামান্য বাস্তবায়ন হয়েছে। ভোলা ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডে নতুন ও পুরনো কিছু কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে- যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ২০১২ সালের পর থেকে সমুদ্রে গ্যাসের অনুসন্ধানের জন্য দফায় দফায় বৈঠক, টেন্ডার আর পরিকল্পনা করাই চলছে। কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে, জ্বালানি খাতে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। গ্যাসের চাহিদা এবং পেট্রোবাংলার চলমান কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- ২০২৬ সাল নাগাদ গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয়ে পড়বে সংস্থাটি। পেট্রোবাংলা যে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে দেখা যায় আরও অন্তত ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য সফলতা আসবে না। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আমদানিনির্ভর এলএনজিই একমাত্র ভরসা। তবে দেশের আর্থিক সংকটে এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে কিনা, সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। কোনো কোনো কোম্পানির সিস্টেম লস মাত্রাতিরিক্ত। যেখানে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সিস্টেম লস বিবেচ্য হতে পারে, সেখানে কোম্পানিগুলোর কোনো কোনো অঞ্চলে ৩০ শতাংশের বেশিও সিস্টেম লস রয়েছে। আমরা মনে করি, সিস্টেম লস কমানোসহ গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার ও খননে মনোযোগ দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে