মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হলেও সুফল মিলছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। তার মানে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে তা এ বছরের নভেম্বরে পেতে ব্যয় করতে হয়েছে ১১১ টাকা ৩৮ পয়সা। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির এ হার চলতি অর্থবছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। নানা কারণে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে গিয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ঠেকে যা আগস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমেছিল। সেপ্টেম্বরে তা আরও কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর ২ দশমিক ০৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। পরের মাসে দশমিক ৫১ শতাংশ পয়েন্ট আরও বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বাড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য।
আগের মাসের তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ১৪ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে। অক্টোবরে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এছাড়া নভেম্বর মাসে বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসা সেবা, পরিবহণ ও শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে। দেশে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের কাছাকাছি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গড় চলন্ত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। সারাদেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাটবাজার থেকে নির্ধারিত সময়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই ভোক্তা মূল্যসূচক প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে জুলাই মাসে দেশে এক ধরনের অচলাবস্থা দেখা যায়। ঢাকায় পণ্যের সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছিল। অর্থনীতিবিদের মতে, মূল্যস্ফীতি সব পর্যায়ের ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ায়। বিশেষ করে দেশের নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
এটা সত্য, নিত্যপণ্যের চড়া দামে গত তিন বছর ধরে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সেই অবস্থার এখনো কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দাম আরও বেড়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেট যেখানে নেই সেখানেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই। দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে ভোক্তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি।